২৭শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জেনারেল হাসপাতালে ওষুধের সংকট তীব্র

এস হাসমী সাজু : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল ফার্মেসিতে প্যারাসিটামলের মত সহজলভ্য ওষুধও মিলছে না। ভর্তি রোগীদের অতিরিক্ত দাম দিয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে ওষুধ। অনেকে সামর্থ্য না থাকায় ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকছে। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কতৃর্পক্ষ বলছে সঠিক সময়ে টেন্ডার না হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, যশোর জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার রোগীদের আশাভরসার স্থল হলো যশোর ২৫০শয্যা হাসপাতাল। সরকারি এই স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠনে প্রতিদিন শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকেন। বহিঃবিভাগে মাসে গড় চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে ১১শ থেকে ১৭শ রোগী। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই হাসপাতালে যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলার অধিকাংশ গরিব মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। উদ্দেশ্য একটাই অল্প খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া। গরিব মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে এই হাসপাতালে ৮৪ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ইডিসিএল ৪৪ প্রকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় অর্থে টেন্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট ৪০ প্রকার ওষুধ কর্তৃপক্ষ ক্রয় করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নেই।

রোববার সরেজমিনে হাসপাতালের সার্জারি, মেডিসিন, হৃদরোগ, গাইনি, অর্থোপেডিক্স, শিশু, পেয়িং, লেবার ওয়ার্ডের একাধিক রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, এসব ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে যৎসামান্য ওষুধ দেয়া হয়। অধিকাংশ ওষুধই বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশুদের জন্য সিরাপ প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, হাসপাতালে নেই। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশন সেফট্রিঅ্যাকসন, সেফ্রাডিন হাইড্রোকরটিসন, ওমিপ্রাজল, ম্যাট্রোনিডাজল, ক্যাসিন, ক্যাপসুল সেফ্রাডিন, ক্লিনডামাইসিন, এমোক্সসাসিলিন, সেফিঙ্মি, ক্লিনডামাইসিন, ওমেপ্রাজল ৪০এমজি ও এনোক্সাপ্যারিন ইনজেকশন (নাভির ইনজেকশন) ট্যাবলেট অ্যালবেনডাজল, কারভিস্টা, সেফুরএঙ্মি, সিটিরিজিন, ইটোরাক, ইসোরাল, হিস্টাসিন, লপিরিল, লপিরিল প্লাস, লোসারটন, নেপরোস্কিন, অফলোক্সাসিন, প্যান্টোনিক্স, কারভিস্টা, সিরাপ অ্যামব্রোক্স, কিলব্যাকসহ অতিপ্রয়োজনীয় আরও কয়েকটি ওষুধ পাচ্ছে না রোগীরা।
এসময় হাসপাতালের মডেল ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন সদর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, গত ৭দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। অপারেশনের পর থেকে সকল ওষুধ বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে ব্যথার ওষুধ ন্যাপ্রোসিন পর্যন্ত পাচ্ছেন না।

এদিকে হাসপাতালের ফার্মেসির সামনে অপেক্ষা করে দেখা গেছে, বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ গ্যাসের ওষুধ, মোনাস, ক্যালসিয়াম ছাড়া কোনো ওষুধ পাচ্ছেন না। ডায়াবেটিসের ট্যাব গ্লিকাজাইড, মেটফরমিন প্রেসারের ট্যাব কার্ডন ৫০ নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।

এ সময় ফার্মেসির সামনে কথা হয় ৬৮ বছর বয়সের এনামুল হোসেনের সাথে তিনি জানান, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার ৭টি ওষুধ লিখেছেন। ৪টি হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে নিতে বলেছে ডাক্তার। কিন্তু ফার্মেসি থেকে ২টি ওষুধ দিয়ে বলে বাকি ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ নেই। বাহির থেকে কিনে নিতে বলেছে।

করোনারি কেয়ার ইউনিটে নিচতলায় বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত খলিলুর রহমান। তিনি সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ডাক্তার দেখিয়েছেন ঠিকই কিন্তু চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে সব বাইরের ওষুধ লিখেছেন। বিনামূল্যের ওষুধ চাওয়ায় চিকিৎসক বলেছেন ওষুধ নেই, কষ্ট হলেও বাইরে থেকে কিনে খাবেন। নতুবা ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে।

অপরদিকে হাসপাতালের স্টোরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে জীবনদায়ী ওষুধের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অতি প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ শূন্য হয়েছে। সরকারের বিনামূল্যের ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। রোগীর চিকিৎসায় প্রায় ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। বিনামূল্যের তেমন কোনো ওষুধ দেয়া হচ্ছে না।

ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জ রতন সরকার জানান, বর্তমানে ফার্মেসিতে অধিকাংশ ওষুধ নেই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ট্যাবলেট গ্লিকাজাইড, মেটফরমিন, কার্ডন ৫০, কার্ডন ৫০ প্লাস নেই। তিনি জানান, বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার গ্যাসের ক্যাপসুলের ওষুধের চাহিদা রয়েছে। গ্যাসের ওষুধ না থাকায় রোগীদের গালমন্দ শুনতে হচ্ছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জুন মাস না আসতেই ওষুধের সংকটের বিষয়ে হাসপাতালে নানা আলোচনা চলছে।

হাসপাতালের স্টোরকিপার সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ২০ভাগ ওষুধ ইডিসিএল থেকে কিনতে হয়। বাকি ৮০ভাগ ওষুধ টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করতে হয়। ফলে এ বছর সঠিক সময়ে টেন্ডার না হওয়ার কারণে ওষুধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন ইডিসিএ এক মাস আগে ওষুধের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও উৎপাদন কম থাকায় চাহিদার ওষুধ এখনও সরবরাহ করতে পারিনি তারা।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে অধিক শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা আসছেন। কিন্তু সকল ওষুধ বাহির থেকে কিনে নিতে পরামর্শ দিতে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান অধিকাংশ শিশুওষুধ হাসপাতালের ফার্মেসিতে সরবরাহ নেই। তাই বাহির থেকে কেনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী জানান, কয়েক প্রকারের ওষুধ শূন্য হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ পেতে ইডিসিএলে যোগাযোগ করা হয়েছে। খুব শিগগির ওষুধের সংকট কেটে যাবে। তিনি আরও জানান, চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ কম সরবরাহ পাওয়ায় মাঝে মধ্যে সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। এবাদেও এ বছর টেন্ডার জটিলতার কারণেও একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ বলেন, টেন্ডার জটিলতার কারণে হাসপাতালে কিছু ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই জটিলতা কেটেছে। নতুন ঠিকাদারকে ওয়াক ওডার দেওয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে হাসপাতালে সরবরাহ করবেন। তখন ওষুধ সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি আশাবাদব্যক্ত করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram