১৯শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জেনারেটরে ‘জান যায়’ রোগীর
জেনারেটরে ‘জান যায়’ রোগীর

এস হাসমী সাজু : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রসূতি ওয়ার্ডে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে আমেনা বেগমের (২৬) ছেলে সন্তান হয়েছে। ওয়ার্ডের সামনে জেনারেটর চালু হওয়ায় আচমকা ভয় পেয়ে চমকে উঠেন তিনি। জেনারেটরের ধোঁয়া, শব্দ ও তাপের কারণে শুরু হয় মাথা ব্যথা। শব্দের কারণে ঘুম আসে না তার। যে ক’বার জেনারেটর চালু হয় তখনি কেঁপে ওঠে সদ্য ভূমিষ্ঠ ঘুমিয়ে থাকা শিশুটি। এভাবে সমস্যার বিবরণ দিয়েছেন সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর নীলগঞ্জ সুপারি বাগান এলাকার আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগম। আমেনা একা নন, তার মত প্রসূতি ওয়ার্ডের রুপালি বেগম (২৩), রেক্সোনা পারভীন (৩৩) সহ সংক্রামণ ওয়ার্ডের একাধিক রোগী একই অভিযোগ করেন।


যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে প্রসূতি ও সংক্রমণ ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে ১৬৮ কিলোওয়াটের জেনারেটর স্থাপন করায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর চালু হয়। তার ভয়াবহ শব্দ, কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনেরা। কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারেন না কারণ জেনারেটরের ভয়াবহ শব্দে কিছুই শোনা যায় না। জেনারেটরের পাশেই হাসপাতালে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড-প্রসূতি ওয়ার্ড। সেখানে সদ্যজাত শিশু ও প্রসূতি মায়েরা থাকেন। অথচ, সেখানেই প্রত্যেক দিন দফায় দফায় জেনারেটর চালানো হয়। সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুরা এই শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠলেও এদিকে দৃষ্টি নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা দ্রুত হাসপাতালের মধ্য থেকে জেনারেটর সরিয়ে পিছনের মাঠে বা অন্য কোনো স্থানে স্থাপনের জন্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে অনেক রোগী জানান।


হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎনির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান। তাই সিসিইউ, এনআইসিইউ, অপারেশন থিয়েটারসহ ওয়ার্ডে লোডশেডিংয়ের সময় সাপোর্ট দিতে এবং বিদ্যুৎ সচল রাখতে ২০১৮ সালে হাসপাতালে প্রসূতি ও সংক্রমণ ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে ১৬৮ কিলোওয়াটের জেনারেটর স্থাপন করা হয়। হাসপাতাল ভবনের ভিতরে স্থাপন করায় এই জেনারেটরই সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জেনারেটর চালু হলে এর থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া, শব্দ ও তাপের কারণে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমনকি পাশে প্রসূতি ওয়ার্ডের নবজাতক, তৃতীয় তলায় হৃদরোগে আক্রান্তরা এবং রক্ত পরীক্ষা নমুনা দিতে আসা রোগীরা ওই স্থানে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে পারছেন না। হৃদরোগীরা শব্দের কারণে ঘুমাতে পারছেন না।

নবজাতকরা জেনারেটর চালুর শব্দে চমকে উঠছে। এছাড়া জেনারেটর দীর্ঘক্ষণ চালু থাকায় প্রসূতি, সংক্রামণ ওয়ার্ড, দ্বিতীয় তলা অপারেশন থিয়েটারের এবং হাসপাতালের প্যাথলোজি বিভাগেও তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের রমিছা বেগম জানান, জেনারেটরের শব্দে আমি সুস্থ হওয়ার চেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বুধবার সিজার হয়েছে এখন ঘুমানোর এবং রেস্ট নেওয়ার দরকার। কিন্তু জেনারেটরের শব্দে ঘুম আসে না। আবার যখন জেনারেটর চালু হয় সে সময় বিকট শব্দে শিশু চমকে ওঠছে।
হাসপাতালের সেবিকা কেয়া তরফদার জানান, জেনারেটরের শব্দে হাসপাতালের কর্মরতরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এছাড়া জেনারেটরের জায়গায় গরমে থাকা যায়না। শব্দের কারণে লেবার ও সংক্রামণ ওয়ার্ডে কাজ করা যায়না । অনেক সময় প্রচন্ড মাথাব্যথার কারণে বমি চলে আসে।


হাসপাতালের গাইনি ডাক্তার নিলুফার ইয়াসমিন এ্যামেলি জানান, রোগী হাসপাতালে আসেন সুস্থ হতে। কিন্তু জেনারেটরের ধোঁয়া, শব্দ ও তাপের কারণে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা ঠিকমতো ঘুমোতে পারে না, ঘুমের ওষুধ দিলেও কাজ হয় না। এছাড়া অনেক রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে তাদেরকে অক্সিজেন দিতে হয়।


এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুস সামাদ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। দ্রুত জেনারেটর অন্য স্থানে নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়কের সাথে আলোচনা করা হবে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুর রহিম মোড়ল জানান, বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ চিকিৎসকরাও অনুধাবন করেছেন। আগামী শনিবার তত্ত্বাবধায়ক আসলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram