১৭ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতির পিতার বাড়ি ফেরা
68 বার পঠিত

স্বাধীনতার ২৫ দিন পর, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, বিজিত দেশ হতে বিজয়ীর বেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরলেন বিজয়ী দেশ বাংলাদেশে। এমন বাড়ি ফেরার ইতিহাস, ইতিহাসে আর আছে কিনা জানা নেই। যে বাড়ি ফেরা কেবল ‘সুইট হোম’—এ ফিরে আসা নয়; যে দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য আজীবন আপ্রাণ সংগ্রাম, অবশেষে তাদের মাঝে নতুন স্বপ্ন বুকে বেঁধে দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে ফিরে পাওয়া দীপ্ত আশা, গড়ে তোলা ‘সোনার বাংলা’।

বিজয়ীর বেশে দেশে ফেরার জন্য ২৮৭ দিনের (৯ মাস ১২ দিন) অপেক্ষা: ‘হয় মৃত্যু নয় স্বাধীনতা’। দেশের স্বাধীনতার জন্য এই মহানায়কের ২৩ বছরের সংগ্রাম, প্রায় ১৩ বছরের কারাবাস। দুই বার ফাঁসির মুখোমুখি (১৯৬৯ ও ১৯৭১) হয়েও দেশের স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করার জন্য বেঁচে ছিলেন তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে; বাঙালি ‘জাতির পিতা’ হবেন বলে।

বাঙালি যখন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বাধীনতার জন্য একাট্টা, ১৯৭১—এর ২৫ মার্চ কালরাতে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নৃশংসতম আক্রমণ চালায় এবং ধানমি—র বাড়ি থেকে ২৬ মার্চ দিবাগত রাত ১.৩০টার সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। বঙ্গবন্ধু চাইলে পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু পালানোর মানুষ বঙ্গবন্ধু নন। এ প্রসঙ্গকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন— ‘আমি মরি, তবু আমার দেশবাসী রক্ষা পাবে।

আমি নেতা, প্রয়োজনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব, কিন্তু পালিয়ে যাব কেন?’ গ্রেপ্তারের পর থেকে অর্থাৎ, ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবন্দি ছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি তারিখ হিসেবে ৮ জানুয়ারি। মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিলি¬ হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন।

সেই দিন অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন অগণিত জনতা মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনি ও গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ ে¯¬াগানে স্বাগত জানান তাদের অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধুকে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরা মাত্রই লাখো বাঙালি তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে জীবিত ফিরে পেয়ে সংবর্ধনা দিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান)। যেখানে তিনি ৩০৯ দিন তথা দশ মাস তিন দিন পূর্বে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন— ‘তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’

তাঁর কথায় দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার যে আকুতি তা পুরো জাতিকে বিমোহিত করেছে, উদ্দীপ্ত করেছে, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল¬াহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর উদাত্ত আহ্বানে বাঙালি স্বাধীন করেছে বাংলাদেশ; তাদের বন্ধু ফিরে এলেন তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে।

দেশমাতৃকার আলো—বাতাসে মুগ্ধ বঙ্গবন্ধু আবেগময় কণ্ঠে বললেন, ‘আমি আজ বাংলার মানুষকে দেখলাম, বাংলার মাটিকে দেখলাম, বাংলার আকাশকে দেখলাম, বাংলার আবহাওয়াকে অনুভব করলাম। বাংলাকে আমি সালাম জানাই, আমার সোনার বাংলা তোমায় আমি বড় ভালোবাসি। বোধহয় তার জন্যই আমায় ডেকে নিয়ে এসেছে।’

বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ (৯ মাস ১২ দিন) থাকলেও তিনি বাংলাদেশের চেতনা ও মুক্তি সংগ্রামে সতত উপস্থিত ছিলেন; নয় মাসজুড়ে প্রেরণা দিয়েছেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রেসিডেন্ট তথা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি বা অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকার তথা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ভাবনা ও চেতনাকে আঁকড়ে ধরে।

বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে বন্দি ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন, বাঙালিকে কেউ ‘দাবায়’ রাখতে পারবে না; বাংলাদেশ স্বাধীন হবে ঠিকই। আর তাই স্বাধীন দেশের জন্য করণীয় সম্পর্কে তিনি প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন। তাই তো সংবিধান প্রণয়নসহ সোনার বাংলা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি, বা সময় নিতে হয়নি। দেশে ফিরেই জাতির জনক ঘর গোছানো শুরু করেছিলেন।

শুরুতে হাত দিলেন রাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে, যে নীতিতে নতুন দেশ বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। দেশের মাটি ও মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্যের অপূর্ব সন্নিবেশ ঘটালেন রাষ্ট্রনীতিতে, উপহার দিলেন চার নীতি, যেখানে সন্নিহিত তাঁর রাজনৌতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং স্বাধীন বাংলার স্বকীয়তা।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত সাতবার সরকার গঠন করেছে— দুবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, আর পাঁচবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬—২০০১ এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ বছর ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি কেবল এশিয়ায় নয়, সারাবিশ্বের মাঝে নজির সৃষ্টি করেছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শসমূহ (যেমন, সর্বস্তরে গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, সামাজিক সমতা, ইত্যাদি) যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এবার সত্যিই বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তরিত করবেন। এবার যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ অধরাই থেকে যাবে; এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। যদিও তা খুব একটা সহজ নয়।

কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তাঁকে সফল হতেই হবে। শুধু দেশ নয়, এখন তাঁর দল আওয়ামী লীগকেও সাজাতে হবে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে, যেন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যেমনি তিনি দল ও দেশের হাল ধরেছেন, তেমনি আওয়ামী লীগের যোগ্য নেতৃত্ব, দল ও দেশকে তাঁর মতো এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram