চৌগাছা প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত খেঁজুর গুড়ের মেলা সমাপ্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে মানসম্মত গুড় উৎপাদনকারী গাছিদের পুরস্কার দেয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের বৈশাখি মঞ্চে আলোচনা সভা ও পুরম্নস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরম্নফা সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তমিজুল ইসলাম খান। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) হুসাইন শওকত, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কলাম লেখক মিজানুর রহমান মধু, চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যড়্গ ড. মো¯ত্মানিছুর রহমান, চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল ও চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ। ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে বক্তব্য দেন এবং গাছিদের পড়্গে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন চৌগাছা সদর ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম।
আলোচনা সভা শেষে মেলায় অংশ নেয়া গাছিদের মধ্য থেকে ‘মানসম্পন্ন গুড় উৎপাদন প্রতিযোগিতা’য় বিজয়ী তিন গাছিকে যথাক্রমে দশ হাজার, সাত হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার, একটি করে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ‘মানসম্মত গুড় উৎপাদন প্রতিযোগিতা’য় ধুলিয়ানি ইউনিয়নের কুষ্টিয়া-ফতেপুর গ্রামের কিসমত আলি প্রথম, পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের আব্দুল গাজী দ্বিতীয় এবং স্বরম্নপদাহ ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের হাসান আলী তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়া আগের ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলার ১১ ইউনয়িন এবং ১টি পৌরসভায় সর্বোচ্চ খেজুর গাছ কাটা গাছিদের মধ্য থেকে ৩ জন করে ৩৬ জনকে পুরস্কৃত করা ছাড়াও উপজেলার প্রায় সাড়ে ছয়শত গাছিকে একটি করে কম্বল প্রদান করা হয়। এছাড়াও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহি খেজুর রস ও গুড় নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মাধ্যমিক শিড়্গার্থীদের জন্য রচনা ও দুই গ্রম্নপে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের পড়্গ থেকে যশোরের জেলা প্রশাসককে একটি রৌপ্যের তৈরি খেজুর গাছ এবং স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকতকেও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অন্যদিকে এমন একটি ব্যতিক্রমী মেলার আয়েজন করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরম্নফা সুলতানাকে সম্মাননা পুরস্কার দেন চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামনু হিমেল।
এরআগে ১৬ জানুয়ারি সোমবার সকাল পৌনে দশটায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে দু’দিনব্যাপি খেজুর গুড়ের মেলা’র উদ্বোধন করা হয়। দু’দিনের মেলায় প্রায় চারশ গাছি গুড়-পাটালি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
মেলা উপলড়্গে উপজেলার গাছি ছাড়াও দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের মধ্যেও এক প্রকার উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরম্নফা সুলতানা বলেন, মেলায় দু’দিনে চার শতাধিক গাছি গুড়-পাটালি বিক্রি করেছেন। দু’দিনে প্রায় পাঁচ হাজার কেজি গুড় বিক্রি করেছেন গাছিরা। এছাড়াও মোবাইলে অনেকেই হাজারের অধিক কেজি গুড়-পাটালির অর্ডার পেয়েছেন।
এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, চৌগাছার ইউএনও ইরম্নফা সুলতানার উদ্যোগে খেজুর গুড়ের মেলা অত্যšত্ম সফল হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এ বছরই আরও দু’একটি উপজেলায় এই মেলা করার। আগামীতে প্রতি বছর চৌগাছা ও যশোরে এই গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, খেজুর গুড়ের ঐহিত্য ফিরিয়ে আনতে সব রকমের উদ্যোগ নেয়া হবে। সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে খেজুর গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। যশোর জেলার এই ব্র্যান্ডিং পণ্যটি আগামীতে দেশে-বিদেশে আরো খ্যাতি অর্জন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই ভেজাল মুক্ত রাখতে হবে।