নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যানের গোডাউন থেকে সরকারি এমওপি সার উদ্ধার নিয়ে তোলপাড় চলছে। সোমবার ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের গোডাউন থেকে আরও ১৯ বস্তা সরকারি এমওপি সার উদ্ধার হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই সারের বৈধতা পরীক্ষা করছে। এর আগে ওই গোডাউন থেকে বের হওয়ার পর আটক ২০ বস্তা সারের জন্য এক বিক্রেতাকে জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার রাতে সদর উপজেলার হামিদপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ওই ২০ বস্তা সার জব্দ করা হয়। পরে সোমবার অভিযুক্ত সার ও কীটনাশক বিক্রেতা নয়ন এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদকে সাত হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দকৃত সার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর সোমবার ফতেপুর ইউপি চেয়াম্যান সোহরাব হোসেনের গোডাউন থেকে আরও ১৯ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামবাসী জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যায় এলাকার নসিমন চালক সাইফুল ইসলাম সাইফার ২০ বস্তা সরকারি এমওপি সার নিয়ে বাজারের নয়ন এন্টারপ্রাইজে আসেন। সার, সিমেন্ট ও কীটনাশক বিক্রেতা শাহাব উদ্দিন আহম্মেদের দোকানে ওই সার পৌঁছালে সরকারি সার দেখে স্থানীয়দের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে স্থানীয় কৃষক—জনতা খবর পেয়ে দোকান ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরে স্থানীয় চানপাড়া ফাঁড়ি ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
স্থানীয় কৃষক রমজান আলী অভিযোগ করেন, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন তার একটি গুদামে ওই এমওপি সার গোপনে রেখে দিয়েছিলেন। রোববার একটি নসিমনযোগে ওই সার নয়ন এন্টারপ্রাইজে বিক্রি করতে পাঠান। এর কিছুদিন আগে কৃষকদের মধ্যে ওই সারের একটি অংশ বিতরণ করা হয়েছিল। বাকী সার বিক্রির চেষ্টাকালে ধরা পড়েছে।
কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, এটা কৃষি প্রণোদনার সার। বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য। কিন্তু চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন তা আত্মসাৎ করে নয়ন এন্টারপ্রাইজের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। এলাকার নসিমন চালক ও সার বহনকারী সাইফার আলী এবং দোকানি তাদের কাছে চেয়ারম্যানের সার বলে স্বীকারও করেন।
নসিমন চালক সাইফুল ইসলাম সাইফার জানিয়েছেন, চেয়ারম্যানের সোহরাব হোসেনের গুদাম থেকে ওই ২০ বস্তা সার নিয়ে তিনি নয়ন এন্টারপ্রাইজে এসেছিলেন। চেয়ারম্যানের গুদামে আরও সার আছে।
পরে যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই সারসহ দু’জনকে আটক করেন। একইসাথে চেয়ারম্যানের গোডাউনও সিলগালা করে দেওয়া হয়।
সোমবার ভ্রাম্যমাণ আদালতা ফের ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে আরও ১৯ বস্তা সরকারি বিএডিসির এমওপি সার উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহামুদুল হাসান চেয়ারম্যানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে এ সার জব্দ করে। আর রোববার রাতে উদ্ধার হওয়া ২০ বস্তা সারের কাগজপত্র না থাকায় সার বিক্রেতা শাহাব উদ্দিনকে সাত হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে, চেয়ারম্যানের ছেলে সোহেল উদ্ধার হওয়া সারের বৈধ দাবি করে একটি ক্যাশমেমো প্রদান করেছেন। যা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। কিন্তু কোন দোকান থেকে এসব সার কেনা হয়েছে তার নাম জানাননি কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী। আগামীকাল জানানো হবে বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরী হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, বিএডিসি’র সার দোকানে বিক্রি অবৈধ নয়। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র থাকতে হবে। সার ক্রয়ের রশিদ দেখাতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহাব উদ্দিনকে সাত হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর চেয়ারম্যানের ছেলে সোহেল একটি ক্যাশমেমো দেখিয়েছেন যা যাচাই বাছাই চলছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে মাঠে নেমেছেন। যদি এই সারের বৈধতা না পাওয়া যায় তাহলে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু সার চুরিই নয়, চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা ধরণের অনিয়মের সাথে জড়িত। সার চুরির বিষয়টি একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। মূল ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে ‘জাল’ ক্যাশমেমো ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।