২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ক্ষুধার্ত মুখে হাসি ফোটায় ‘ব্যাক বেঞ্চার মেজবান’

নিজস্ব প্রতিবেদক : শুক্রবার বেলা পৌনে দুইটা। যশোর শহরের বাণিজ্যিক এলাকা রবীন্দ্রনাথ সড়কের (আরএন রোড) নান্নু চৌধুরী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট মার্কেট। এই মার্কেটের নিচ তলাতে গোটা বিশেক দোকান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সব দোকানই বন্ধ। এমন সময়ে নীল টি শার্ট আর গলায় আইডি কার্ড পরিহিত দুই যুবক এসে মার্কেটের সামনে গেটে ব্যানার টানালেন। তাতে লেখা, ‘ব্যাক বেঞ্চার মেজবান’। মার্কেটের ভিতরে কয়েকজন মেঝে ঝাড়ু দিলেন। এরপর বসার জন্য মেঝেতে বিছানো হলো চট (পাটি)। এরই মধ্যে দু—একজন করে ছিন্নমূল, রিকসা, ইজিবাইক চালক, শ্রমজীবীসহ দরিদ্র মানুষ আসতে থাকেন সেখানে। একটু দূর থেকে কয়েক হাড়ি রান্না করা খাবার নিয়ে এলেন আরও কয়েক যুবক। সঙ্গে আনলেন প্লেট, গ্লাস আর পানির জগ। এরই মধ্যে বিভিন্ন বয়সী চার শতাধিক মানুষ উপস্থিত হন সেখানে। শুরু হয় খাবার পরিবেশন। তৃপ্তি ভরে খিচুড়ি—মাংস খেয়ে তারা চলে যান।

<<আরও পড়তে পারেন>> মুরুব্বীদের মিলন মেলা

দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরে এ খাবারের ব্যবস্থা করেন যশোরের এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’। ‘খাবার আছে যতক্ষণ, পরিবেশন করা হবে ততক্ষণ’— এমন স্লোগান নিয়ে ২০২৩ সালের পহেলা আগস্ট থেকে সংগঠনটি নিয়মিত প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিকে ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ এই মেজবানে অংশ নিলেও এখন সেটি চার শতাধিক মানুষে দাঁড়িয়েছে। যা প্রতি মাসে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংগঠনটি এসব মানুষের খাবার দেওয়ার পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড করে আসছেন। করোনাকালে সংগঠনটি অক্সিজেন সেবা, খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মধ্যে দিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন।

শুক্রবার দুপুরে রবীন্দ্রনাথ সড়কের (আরএন) যে মার্কেটে খাবার দেওয়া হচ্ছে; সেই মার্কেটের সামনে অর্ধশতাধিক ইজিবাইক রিকসা সড়কে পাশে দাঁড় করানো। এসব যানের চালকরা সবাই হাত মুখ ধুয়ে পাটিতে আসন পেতেছেন। এদের সাথে হতদরিদ্র পথচারীরাও রয়েছেন। সংগঠনের সদস্যরা কেউ প্লেটে তাদের মুরগির মাংস ও খিচুড়ি পরিবেশন করছেন। কেউ বা গ্লাসে পানি দিচ্ছেন। সবাই ঠিকমতো খাবার পাচ্ছেন কিনা কয়েকজনকে আবার তদারকিও করতে দেখা গেছে।
সেখানে খেতে আসা শংকরপুর বস্তিতে থাকা প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক রুহুল আমিন জানান, ‘শহরে ভিক্ষা করি। গেল বছর একজনের মাধ্যমে জানতে পারি এখানে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার ভালো মন্দ খেতে দেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিক্ষা করে দুপুরে এখানে এসে ভালোমন্দ খায়।’

গহরজান বিবি নামে আরেক ভিক্ষুক বলেন, ‘বাড়িতে মন ভরে খেতে পারিনে। আজ মন ভরে খেয়ে গেলাম। দোয়া করি আমরা এটা প্রতি মাসে না; প্রতি সপ্তাহে যেন এমনভাবে খেতে পারি। রিকশাচালক হাবিবুর রহমান জানান, ‘দরিদ্র মানুষ, তাই ভালো খাবার সব সময় খেতে পারেন না। সব সময় পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। এই সংগঠন মাসে একবার এমন আয়োজন করে ভালো লাগে।’

সুলতান নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘শহরে এসেছিলেন একটা কাজে। এখানে আসার পর দেখলেন, বিনা মূল্যে খাওয়ানো হচ্ছে। তাই তিনি খেয়ে নিলেন। মেজবানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও পৌরসভার কর্মচারী আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘দরিদ্র মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে খায়। এটি দেখতে তার খুব ভালো লাগে। তাই তিনি সময় পেলে চলে আসেন এখানে।’

সংগঠন ‘ব্যাক বেঞ্চার’ সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। সদস্যরা কেউ চাকরিজীবী কেউ বা ব্যবসায়ী। এই সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে প্রথমে নিজেদের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে একবেলার খাবারের আয়োজন শুরু করা হয়। পরে অনেক ভালো মনের মানুষ এতে শরিক হচ্ছেন। এছাড়া অনেক দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সংগঠনটির সভাপতি জাকিউল ইসলাম পিংকু জানান, ‘আমরা ভালো আছি, আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী না। আমরা চাই যারা এই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, হতদরিদ্র তাদেরকে সাথে নিয়েই ভালো থাকতে। সেই নীতি থেকেই আমরা গত বছর থেকে এই খাবারের আয়োজন করে আসছি। প্রথম দিকে ৬০—৭০ জন খাবার খেতে আসলেও এখন সেটি চার শতাধিক মানুষে পেঁৗছেছে। নিজেরা চাঁদা ছাড়াও বিভিন্ন দানশীল মানুষ এখানে সহযোগিতা করছেন। তিনি আরও জানান, ‘এসব অর্থ দিয়ে খরচ মেটে না। বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম।’

সংগঠনটির উপদেষ্টা শাহনেওয়াজ আনোয়ার লেনিন বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসেই বিভিন্ন আইটেমে খাবার দিয়ে থাকি। খাবার হিসেবে ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি ও মুরগির মাংস দেওয়া হয়। কখনো খিচুড়ি মাংসও দেওয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে আমরা মানবতা, মমত্ববোধকে প্রাধান্য দেই। তিনি জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য মাসে একবার নয়; প্রতি শুক্রবার আমাদের খাবার পরিবেশনের। ছোট পরিসরে আমরা শুরু করেছি; যদি সমাজের বিত্তবানরা আমাদের এই কাজে এগিয়ে আসে তাহলে সেই লক্ষে আমরা পেঁৗছে যাবো। পাশাপাশি সমাজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সবাই নিজ নিজ এলাকা থেকে এভাবে এগিয়ে আসলে সমাজের এই হতদরিদ্ররা ভালো থাকবে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram