১৮ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কেন বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা : করণীয় কী
83 বার পঠিত

সৈয়দ ফারুক হোসেন : রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি। দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও তাই প্রতিদিন বিষয়বস্তু হিসেবে রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমান বাংলাদেশে দৈনিক মৃত্যুর হার গণনা করলে যা দাঁড়ায়, তার একটি বড় অংশজুড়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। এর প্রধান কারণ অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাসহ সড়কপথে ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে দূরপাল্লার যান চালানো হয়।

ট্রাফিক আইন না মানলে চালকদের জন্য কঠিন রকম বিচারব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও গত নভেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৪১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৪৬৭ নিহত ও ৬৭২ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৫৩ জন নারী ও ৬৬ শিশু ছিল। এদিকে ২০৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৮১ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.৭৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮.২৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২২.৬৯ শতাংশ।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া চালনা, মাত্রাতিরিক্ত গতি, আইন না মানা এবং চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকা। রাজধানী ঢাকায় এ প্রবণতা বেশি দৃশ্যমান। সড়ক—মহাসড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল চালকরা ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করে, এমনকি কোনো কোনো সময় বাইক ফুটপাতের ওপর উঠিয়ে দেয়।

মোটরসাইকেল চালকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানাতে হবে। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। তাই মোটরসাইকেল চালকদের মোটিভেশনেরও দরকার আছে। আর তা হতে পরে পরিবারের ভেতরেই।

পরিবারের অন্য সদস্যরা যদি মোটরসাইকেল চালককে সাবধানে চালানোর দীক্ষা দিতে পারেন, তা হলে তা দুর্ঘটনা রোধে বড় সহায়ক হবে। চালক বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালালেই তাকে থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর একটি বড় কারণ হেলমেট না থাকা কিংবা নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করা। তাই শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও চালক ও আরোহীর ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মোটরসাইকেল চালানোর জন্য সড়কে আলাদা কোনো লেন নেই। ফলে চালককে বিশৃঙ্খলভাবে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যায়।

প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। লোকাল বাস, সিএনজি অটোরিকশা, টেক্সিক্যাবসহ গণপরিবহনের প্রতিটি সেক্টরেই বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা ধরনের ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে নগরবাসী। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের হাত ধরে সারা বিশ্বেই যোগাযোগব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে চলেছে। অ্যাপভিত্তিক ব্যবসায় বাণিজ্য এবং রাইড শেয়ারিং তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তৃতির সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ইতোমধ্যে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও এবং উবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু গণপরিবহনের বেপরোয়া চালকদের মতো এসব অ্যাপভিত্তিক নেটওয়ার্কেও কিছু বেপরোয়া, অদক্ষ ও অপরাধপ্রবণ বাইকার ও গাড়িচালক ঢুকে পড়েছে। এদের কারণে পাঠাও এবং উবারের মতো গণপরিবহন নেটওয়ার্কিং এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

বেপরোয়া ও অদক্ষ বাইক চালনার শিকার হয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঠাওচালক ও আরোহীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ও দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের অনেকের প্রশিক্ষণ নেই। তা ছাড়া অনেকে আবার রাজধানীর সড়ক সম্পর্কে যথেষ্ট পরিচিতও নয়। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। লাখ লাখ মোটরসাইকেলের কারণে একদিকে যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে, তেমনি সড়ক—ফুটপাতের যাত্রী ও পথচারীরা বেশিরভাগ সময়ই বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ছেন।

সড়ক ব্যবস্থায় যদি আরও  নজরদারি বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়  তা হলে হয়তো সড়ক দুর্ঘটনা নামের অনাকাঙ্ক্ষিত এ বিষয়টি অনেকটাই কমে আসবে। আমাদের একটু বাড়তি সচেতনতাই হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির উপায়। দূরপাল্লার যানের মধ্য চলে প্রতিযোগিতামূলক আচরণ। যেখানে সামান্য একটু অসাবধানতাই ডেকে আনতে পারে অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না— এ কথা মনে রেখে প্রয়োজন মোটরযান অধ্যাদেশ, ট্রাফিক আইন, রোড সাইন, সিগন্যাল ও লেনবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও গাড়ির যন্ত্রাংশ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা, নিরাপদে নৌযান সম্পর্কিত সচেতনতা, নিরাপদে গাড়ি চালনা সম্পর্কিত সচেতনতা, শব্দ দূষণ রোধে গাড়িচালকদের ভূমিকা, নিরাপদে গাড়ি চালনা সম্পর্কিত সচেতনতা, চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যাতে করে তারা দুর্ঘটনার বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হয়।

চালক ও পথচারী এবং যাত্রীদের আরও সচেতন হয়ে আইন মেনে চলার জন্য কঠিন আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ এবং প্রশাসনকে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা না ঘটে। একেক দুর্ঘটনার জন্য একেকজন দায়ী। কোথাও চালক দায়ী, কোথাও হেলপার দায়ী। কোথাও গাড়ির ফিটনেস না থাকা দায়ী। মোট কথা প্রত্যেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

আমাদের সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে কোনো দুর্ঘটনাই যেন আমাদের পৌঁছে না দেয় অনিশ্চিত কোনো ভবিষ্যতের কাছে। জনসচেতনতাই অনেকাংশে রোধ করতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কপথে নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। দুর্ঘটনার কারণে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সারা জীবন একটি দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করতে থাকে। তার স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হতে থাকে।

প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক বা মালিকের উপযুক্ত শাস্তির নজির নেই। চালক ও মালিকদের সাজা শিথিল এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না। মূল কারণ সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে রয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনের প্রয়োগ না হওয়া। প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ আর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন বহু মানুষ।

একটি সড়ক বা  নৌদুর্ঘটনা একটি পরিবারের মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে সাজানো স্বপ্ন, তছনছ হয়ে যাচ্ছে সুখের সংসার। এখন কর্মজীবী মানুষ যথাসময়ে বাসায় না ফিরলে প্রথম যে ‘আশঙ্কা’ মনে দানা বাঁধে সেটি হলো সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা এখন একটি মহামারীর নাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মৃত্যুফাঁদে পা দিয়ে লাশ কিংবা জীবন্ত লাশ হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। প্রতিদিনই কারও না কারও স্বজন হারানোর আর্তনাদ কিংবা দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে আকাশ—বাতাস।

যাদের অঙ্গহানি ঘটছে তাদের বাকি জীবনে আর সুস্থ হওয়ার বা হারানো অঙ্গ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাদের জীবনটা নির্মম হয়ে পড়ে। মহাসড়কে এবং আন্তঃজেলা সড়কে যারা তিন চাকার যানবাহন চালক, তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই আবার ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। বড় একটি  সতর্কবার্তা হলো যাত্রীবাহী যানবাহন চালাতে গেলে অবশ্যই চালকের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, অপ্রাপ্তবয়স্করা এসব গাড়ি চালাচ্ছে।

অথচ তাদের দক্ষতা ওভাবে গড়ে ওঠেনি। আর তিন চাকার যান এবং মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে তো বয়সের কোনো তোয়াক্কাই নেই। এগুলো দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম করাণ। দুর্ঘটনা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। হয়তো অনেকটা অজান্তেই সামনে চলে আসে আর ধ্বংস করে দেয় জীবন বা জীবনের ভবিষ্যৎ। দুর্ঘটনা জীবনের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটু অসাবধানতার আভাস পেলেই হুটহাট করে সামনে চলে আসে। যখন আর কিছুই করণীয় থাকে না।

কিন্তু যার যা করণীয়টুকুু নিয়ে যদি দুর্ঘটনার আগেই কিছু ভাবা যায় তা হলো  সচেতনতা। একটু সচেতনতা  আমাদের বাঁচাতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব দুর্ঘটনার হাত থেকে। সৌজন্যে : আমাদেরসময়

লেখক : রেজিস্ট্রার. বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, জামালপুর

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram