বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরে জানুয়ারি মাসে ৬ খুন, ৩৮টি চুরি, বেশ কয়েকটি ছুরকাহতের ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। রোববার সকালে যশোর জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে আইন শৃঙ্খলা কমিটির এ সভা হয়।
সভায় আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি বাদে সব খুনের কারণ শনাক্ত হয়েছে, আসামিরাও আইনের আওতায় রয়েছে। খুন বা ছুরিকাঘাত যাইই হোক সবগুলিই পারিবারিক, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা হঠাৎ ঘটা ঝগড়া, রাগারাগির ফসল, পূর্ব পরিকল্পিত নয়। তারপরও পুলিশ তৎপর রয়েছে। দ্রুত আসামি শনাক্তসহ আটক ও গ্রেপ্তারের কাজ করছে। বেশিরভাগ চুরি যাওয়া মালামালও উদ্ধার হয়েছে।
এছাড়াও জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় শহরের যানজট কমানো, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, হাসপাতাল—ক্লিনিকের সামনের জট কমাতে নিয়তমিত যৌথ অভিযান পরিচালনাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২৫০ শয্যা হাসপাতালের ২০০ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক থাকার বিষয়ে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিভিল সার্জনের এক্ষেত্রে ভূমিকা তেমন নেই। সে সময় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, কোনো ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিক সেন্টারের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই, এ কারণেও দিন দিন শহরে যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
সভায় জানানো হয়, শহরের দড়াটানা থেকে সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সির সামনে গাড়িতে করে যেতে ১৫ মিনিট সময় লাগে কিন্তু হেঁটে যেতে লাগে পাঁচ মিনিট। সেখানে জানানো হয়, হাসপাতাল গেটের দুই পাশে অবৈধ দোকান, ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অতিরিক্ত যানবাহনে রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানো এক প্রকার কঠিন কাজ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বার বার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনারও দাবি ওঠে। এ সময় জেলা প্রশাসক যৌথ অভিযানের মাধ্যমে যানজট দূরকরণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি, ভারপ্রাপ্ত এডিএম) মোছা. খালেদা খাতুন রেখা, সহকারী সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু, র্যাব—৬ এর প্রতিনিধি সহকারী পুলিশ সুপার ফয়সাল তানভীর, শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, স্বেচ্ছাসেবকরীগের জেলা সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজার মনিটরিং করা, রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে যশোর ও নওয়াপড়ায় আমদানিকারক ও বড় ব্যসায়ীদের সাথে বৈঠক করাসহ নানা উদ্যোগের কথা জানানো হয়। এ সময় আলোচকরা জানান, বার বার ম্যাজিস্ট্রেসি অভিযান চালালে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই প্যানিক ছড়িয়ে বাজরকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ নিতে পারে। এ সময় জানানো হয়, নওয়াপাড়ায় ব্যবসায়ীরা বাজারে খাদ্য দ্রব্য না ছেড়ে গুদামে পচিয়েছে, শুধু আইন দিয়ে এর প্রতিকার হবে না, সততার ওপরও জোর দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে গুদামজাতকারীদের প্রতিদিনের গুদামে রক্ষিত স্টক তালিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাচাই করারও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় জানানো হয়, পৌরসভার বড় বাজারে ২০০৪ সালে ইজারা মূল্য ছিল মাত্র আড়াই লাখ টাকার মতো, এখন তা ৬৫ লাখ টাকায় চলছে ফলে কাঁচামালের দামও বাড়ছে এবং ভোক্তাকেই এই বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। ইজারাদররা শহরসহ বিভিন্ন হাট—বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টোল আদায় করে।
একইভাবে সাতমাইল—চুড়ামনকাটি যেখান থেকেই ট্রাকে সবজি—তরিতরকারি ঢাকাসহ ভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে সেখানে ট্রাক লোডের সময়ই একটি সিন্ডিকেটকে চাঁদা হিসেবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা গুণতে হয়, ফলে কাঁচামালের দামও বেড়ে যায়, এটাও ভোক্তাকেই গুণতে হয়। এতে উৎপাদক বা কৃষকের কোনো লাভ হয় না, বাজার হয় অনিয়ন্ত্রিত। এসব বিষয়ে ধিরে ধিরে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণেরও উদ্যোগ নেয়ার দাবি ওঠে।
সভায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি, র্যাবসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা গতমাসে তাদের গৃহীত উদ্যোগ ও ব্যস্থার চিত্র তুলে ধরেন।