২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঈমানদারের ঘুমের নীতিমালা
40 বার পঠিত

সমাজের কথা ডেস্ক : আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (আল কুরআন—৩৯ : ৪২)

তাফসিরে মাজহারির বর্ণনা মতে, প্রাণ কবজ করার অর্থ—তার সম্পর্ক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। কখনো বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সব দিক দিয়ে প্রাণকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এর নাম মৃত্যু। আবার কখনো শুধু বাহ্যিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, তবে অভ্যন্তরীণভাবে যোগাযোগ থাকে। এর ফলে কেবল বাহ্যিকভাবে জীবনের লক্ষণ তথা চেতনা ও ইচ্ছাভিত্তিক নড়াচড়ার শক্তি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং অভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে দেহের সাথে প্রাণের সম্পর্ক বাকি থাকে। ফলে সে শ্বাস গ্রহণ করে এবং জীবিত থাকে। এরই নাম ঘুম।

তাই এ মহানিয়ামতকে নবীজী সা:—এর আদর্শেই বরণ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য ঈমানের দাবি।
ঘুমানোর প্রস্তুতিপর্বে কতিপয় করণীয় :
১. ইশার নামাজের পর দ্রুত ঘুমানোর চিন্তা করা অর্থাৎ দুনিয়াবি কথাবার্তা না বলা। (বুখারি খণ্ড—১,পৃষ্ঠা—১৭৭)
২. ঘুমানোর আগে মিসওয়াক করা। (মিশকাত)
৩. অজুর সাথে ঘুমানো। (বুখারি—২৪৭, তিরমিজি খণ্ড—২, পৃষ্ঠা—১৭৭)
৪. প্রথমে তিনবার বিছানা ঝেড়ে নেয়া। (তিরমিজি খণ্ড—২,পৃষ্ঠা—১৭৭)
৫. ঘুমানোর আগে উভয় চোখে তিনবার সুরমা লাগানো। (শামায়েলে তিরমিজি, পৃষ্ঠা—৪)

প্রস্তুতিপর্বে নবীজীর কয়েকটি অভ্যাস :
নবীজী সা: বাড়ি থাকতেন বা সফরে থাকতেন, সর্বাবস্থায় ঘুমের সময় শিয়রের পাশে সাতটি বস্তু রাখতেন— ১. তেলের শিশি; ২. চিরুনি; ৩. সুরমাদানি; ৪. কেঁচি; ৫. মিসওয়াক; ৬. আয়না; ৭. একটি ছোট কাঠের ছড়ি, যেটি মাথা ও দেহ মোবারকের বিভিন্ন স্থান চুলকানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। (সুবুলুল হুদা ওররাসাদ ফি সিরাতে খাইরিল ইবাদ, খণ্ড—৭, পৃষ্ঠা—৩৪৬, মাকতাবুতশ শামেলাহ)
নবীজী সা: রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন চৌকির নিচে প্রয়োজন সারার জন্য একটি কাঠের তৈরি পাত্র রাখতেন, রাতে যখন জাগ্রত হতেন, তখন প্রয়োজন হলে সেখানে প্রয়োজন সেরে নিতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

নিদ্রার পূর্বমুহূর্তের কিছু আমল :
১. কালেমায়ে তাইয়েবা পড়া। (জাদুল মাআদ, খণ্ড—৪,পৃষ্ঠা—২৪৬)
২. শয়নের সময় স্বাভাবিক গায়ের জামা কাপড় খুলে ঝুলিয়ে রেখে সাধারণ হালকা জামা কাপড় (লুঙ্গি) পরা উত্তম। (আবু দাউদ, জাদুল মাআদ)
৩. আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমানো। (বুখারি—২৩১১)
৪. সূরা—মুলক ও সূরা আলিফ লাম মিম সিজদা পড়ে ঘুমানো।
৫.তাসবিহে ফাতেমি অর্থাৎ ৩৩ বার (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার (আলহামদুলিল্লাহ) ৩৪ বার (আল্লাহু আকবার) বলা। (তিরমিজি খণ্ড—২, পৃষ্ঠা—১৭৮)
৬. তিন কুল অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে দুই হাতে ফুঁ মেরে উভয় হাত পুরো শরীরে মুছে দেবে। এভাবে তিনবার করা। (তিরমিজি খণ্ড—২,পৃষ্ঠা—১৭৮)

৭. সূরায়ে আলিফ লাম মিম সিজদা ও সূরায়ে মুলক পড়া। (তিরমিজি খণ্ড—২,পৃষ্ঠা—১৭৮)
৮. সূরায়ে কাফিরুন পড়ে ঘুমানো। (আবু দাউদ—৪৯৭১, তাবারানি)
৯. ডান পার্শ্বে ডান হাত চেহারার নিচে রেখে শয়ন করা। (বুখারি—২৪৭, তিরমিজি খণ্ড—২,পৃষ্ঠা—১৭৮)
১০. দোয়া পড়া : বি ইসমিকা রাব্বি ওজা’তু জাম্বি ও বিকা আরফাউহু ইন আমছাকতা নাফসি ফাগফির লাহা ওয়া ইন আরসালতাহা পাহপাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।

এ দোয়াটিও বর্ণিত আছে— আল্লাহুম্মা বি ইসমিকা আমুতু ওআহইয়া (হে! আল্লাহ আপনার নামেই মরছি আর আপনার নামেই জাগব)
১১. যখন ঘুম না আসে তখন পড়বে— আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তা—ম্মাতি মিন গাজাবিহি ওয়া ইকাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাজাতিশ শায়াতিনি ওয়া আঁইয়াহদ্বুরুন।

১২. ঘুমানোর প্রাক্কালে এ দোয়াটি পড়া— ‘আল্লাহুম্মা আসলামতু ওয়াজহি ইলাইকা, ওয়া ফাওওয়াজতু আমরি ইলাইকা, ওয়া আরজা’তু জাহরি ইলাইকা, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালজাআ ওয়া মালজাআ মিনকা ইল্লা ইলাইকা, আল্লাহুম্মা আ—মানতু বিকিতাবিকা আল্লাজি আনজালতা, ওয়াবি নাবিয়িকাল্লাজি আরসালতা’ এ দোয়াটিই হবে ঘুমানোর আগে শেষ কথা।
(বুখারি প্রথম খণ্ড, হাদিস—২৪৭)

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram