নিজস্ব প্রতিবেদক : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র দুইজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার রাতে মাগুরার আলমখালী যাত্রী ছাউনি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন পাবনার রাঘবপুর গ্রামের ঈষান হায়দার এবং বরিশালের আব্দুল করিম।
বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব ৬ এর খুলনা দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ৬ খুলনার সিও লে: কর্নেল ফিরোজ কবীর জানান, বুধবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব ৬ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে মাগুরা আলমখালী যাত্রী ছাউনি এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হয়ে গোপন বৈঠক করছে। এরই প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুইজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে কয়েকটি জিহাদী বই উদ্ধার করে র্যাব।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা নিজেরাই সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এছাড়াও বিভিন্ন উগ্রবাদি বই, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো।
অন্যদিকে তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে তাদের আত্মীয়—স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করে। পাশাপাশি মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করে বিভিন্ন তথ্যের অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো।
র্যাবের মিডিয়া উইং জানায়, গ্রেফতারকৃত ঈষান হায়দার ইয়াকুব হুজুরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। মূলত সে পাবনা জেলার দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করে আসছিলো। পাশাপাশি সে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রেরণের কাজেও নিয়োজিত ছিল।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল করিম ঈষান হায়দার ও আব্দুল্লাহর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। সে তার নিজ এলাকা বরিশালে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সংগঠনের নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। টার্গেট কিলিং এর ব্যপারে সে অত্যন্ত উৎসাহী ছিল।
পাশাপাশি সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান এবং সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করতো। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের প্রচার—প্রচারণা করে সাধারণ মানুষদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। গ্রেফতারকৃতদের নামেই পূর্বে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। একারণে তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
র্যাবের তথ্যমতে, সা¤প্রতিক সময়ে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’র সাথে একত্রিত হয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর আমীর ও শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, র্যাব ৬ খুলনার উপ—প্রধান এম নাজিউর রহমান এবং ঝিনাইদহর কম্পানি কমান্ডার ইশতিয়াক হোসাইন।