৭ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অ্যাম্বুলেন্স চালক
অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছে অসহায় প্রশাসন

সোমেল রানা, মেহেরপুর: মেহেরপুর হাসপাতাল এখন বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ সব পাবলিক অ্যাম্বুলেন্স চালকরা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে বিপাকে পড়তে হয়। বাইরের থেকে কোনো অ্যাম্বুলেন্স নিলে সে রোগী ও স্বজনকে হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হয় না। এসব চালকদের প্রভাব এটতা বেশি যে, হাসপাতাল প্রশাসন এদেরকে বাইরে বের করতে উদ্যোগ নিলে চিকিৎসকদের প্রতি চড়াও হন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। এদের অনেকেই লাশ পৌঁছে দিয়ে ‘বকশিশ’ দাবিও করে।

জানাগেছে, আগে হাসপাতল চত্বরে পাবলিক অ্যাম্বুলেন্সকে থাকতে দেয়া হতো না। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন উদ্যোগ নেয়াতে পাবলিক অ্যাম্বুলেন্স চালকরা হাসপাতাল চত্বর থেকে অ্যাম্বুলেন্স বাইরে সরিয়ে নিত্যে বাধ্য হয়েছিল। গত বছর থেকে হাসপাতালে জ্বালানি তেলের বাজেট না থাকার অজুহাতে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চলা বন্ধ হয়ে যায়। তখন হাসপাতাল কতৃর্পক্ষই একটু কৌশলেই পাবলিক অ্যাম্বুলেন্সকে হাসপাতালের সীমানার মধ্যে ফিরিয়ে আনে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে জ¦ালানি তেলের বাজেট পাওয়ার পর আবার সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলা শুরু হয়। কিন্তু হাসপাতাল চত্বর থেকে ব্যক্তিগত ও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স আর বের করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এরফলে অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বর জুড়ে থাকায় হাসাপাতাল কার্যক্রম পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স অলস দাঁড়িয়ে আছে। রোগী পরিবহনে চাহিদা যতটা, তার চেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বেশি। কিন্তু রোগী পেলেই ভাড়া হাঁকা হয় অনেক বেশি। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্স না নিয়ে অন্য কোথাও থেকে কম টাকায় ভাড়া করার সুযোগনেই। হাসপাতালকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট রোগীকে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সে তুলতেই দেয় না।

পাবলিক অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জানান, তাদের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের আয় কমে গেছে। এ কারণে খরচ পোষাতে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার কোনো তালিকা নেই। সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও নেই। যে যেভাবে পারছে, রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স নামাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে হাসপাতালের কর্মচারিদের (ওয়ার্ডবয় ও আয়া) ওপর। এ জন্যে তাদের ভাড়ার অন্তত একটা অংশ কমিশন দিতে হয়। এই কমিশন বাণিজ্য না থাকলে ভাড়া অনেকটাই কমে যেত।

হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া এক প্রকার অসম্ভব এবং রোগীদের জীবন—মরণ প্রশ্ন থাকে বলে স্বজনরা আর সমস্যা না করে যে টাকা চায় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা তাইই দিয়ে রোগী বহন করান। বেশির ভাগ রোগীর আত্মীয়স্বজনকে হাসপাতালের সামনে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দালালদের খপ্পরে পড়ে রোগী ও লাশ আনা—নেওয়া করতে বাধ্য হতে হয়।

গাংনীর ভোমরদহ গ্রামের আলী হোসেন জানান, সম্প্রতি তাদের এক শিশু সন্তানকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাপতালে স্থানান্তর করেন। বেসরকারি একটি অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে রোগী মারা যায়। ওই অ্যাম্বুলেন্সেই ভাড়া চুক্তি করে মৃত সন্তান গ্রামে নিয়ে আসি। এসময় ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক তাদের বলেন ‘শিশু সন্তানের লাশ সুন্দরভাবে বাড়ি পৌঁছে দিলাম। বকশিশ দিবেন নাহ?’

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ব¡াবধায়ক জামির মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার বলেন, বহিরাগত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিক্সার জট মুমূষুর্ রোগীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে সরকার নির্ধারিত মাইলেজ রেটের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়না। তিনি স্বীকার করেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা স্থানীয়ও প্রভাবশালী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতাল চত্বর থেকে তাদের অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে নিতে বলা হলে তারা চিকিৎসকদের প্রতি মারমুখো হয়। ফলে আমরা অসহায়। তিনি জানান, গত ২০২২—২০২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতের ৩৫ লাখ টাকার বাজেট থেকে ২৭ লাখ টাকা বাজেট পাওয়া যায়। ফলে ওই সময় জ¦ালানি সংকটে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখতে হয়। চলতি অর্থবছরে বাজেট পাওয়াতে ফের অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram