সমাজের কথা ডেস্ক : সাত বছরে ৪৭৫ মামলা হয়েছে শিল্প পুলিশের খাতায়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি, আর তদন্ত চলমান আছে ৮০টির।
শিল্প এলাকায় অশান্তি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে সম্ভাব্য শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশ যাত্রা শুরু করে। তবে এর সাত বছর পর ২০১৭ সাল থেকে মামলা তদন্তের অনুমতি পায় পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি; যা ‘শিল্প পুলিশ’ ও ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ’ নামেও পরিচিত। এই সাত বছরে দেশের ছয়টি শিল্প এলাকায় নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে মোট ৪৭৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ৩১৩টির চার্জশিট এবং ৭৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পেরেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি, আর বর্তমানে তদন্ত চলমান আছে ৮০টির।
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ড, মারামারি, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দেনা—পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রতিষ্ঠানগত বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে শ্রমিকদের মনোমালিন্য; প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে মাঝে মধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে শিল্প এলাকা। অগ্রিম তথ্য সংগ্রহ করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরও শিল্পাঞ্চল এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের হলেও এসব মামলার তদন্তভার পরে শিল্প পুলিশের উপর।
শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, সংস্থাটির আওতাধীন ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা এলাকায় ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭ বছরে নানা ধরনের অপরাধের কারণে গার্মেন্টস কেন্দ্রিক মামলা হয়েছে ৪৭৫টি। এরমধ্যে শিল্প পুলিশের ১ নম্বর অঞ্চল ঢাকায় মোট ৮৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে ৬৩টির অভিযোগপত্র ও ১১টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তিনটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিও হয়েছে। আর বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে ১২টি মামলা।
সংস্থাটির ২ নম্বর অঞ্চল গাজীপুরে ১০৩টি মামলার মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৬৩টি, আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ১৯টির। আর নিষ্পত্তি হয়েছে একটি মামলা। আর এখন তদন্তাধীন আছে ২০টি মামলা। শিল্প পুলিশে সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের হয়েছে তিন নম্বর অঞ্চল চট্টগ্রামে। এখানে মোট ১৭২টি মামলার মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ১১৮টির। এরমধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ২৭টির। নিষ্পত্তি হয়েছে দুটি মামলার, আর বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে ২৫টি মামলা।
এছাড়াও, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ—৪ অঞ্চল নারায়ণগঞ্জে মোট ৬১টি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৩৩টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ১২টির এবং নিষ্পত্তি হয়েছে একটি মামলা। এখানে বর্তমানে ১৫টি মামলার চলমান রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ—৫ অঞ্চল ময়মনসিংহে দায়ের হওয়া ২৪টি মামলার মধ্যে ১৮টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। একটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর বর্তমানে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে তিনটি। শিল্প পুলিশের ৬ নম্বর অঞ্চল খুলনায় মোট দায়েরকৃত মামলা ২৬টি। এর মধ্যে ১৮টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তিনটির। মামলা তদন্তাধীন রয়েছে পাঁচটি।
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, শিল্প পুলিশ জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিশ্বায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে অপরাধীরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে অপরাধে জড়াচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা ভিন্নতর হওয়ায় সেগুলো প্রতিরোধ ও উদঘাটনেও ভিন্নতর দক্ষতার পুলিশিং অপরিহার্য। সময়োপযোগী ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত কার্যক্রমের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে হালনাগাদ গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতাভুক্ত করা আবশ্যকতা রয়েছে।
শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবর রহমান বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক অসন্তোষ, কোনও স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন বা ষড়যন্ত্র, গুজব, শ্রমিকদের বেতন ভাতা, ছুটি সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রিম তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে শিল্প পুলিশ। সেই সঙ্গে শিল্প খাতে শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করা হচ্ছে।