এস, এম মাহবুবুর রহমান, খুলনা থেকে : রূপসা উপজেলার ৭৮টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সেবার মান বাড়লেও কাটেনি জনবল সংকট। ১৭৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর স্থলে ১১৬ জন নিয়ে চলছে কর্মকাণ্ড। শূন্য রয়েছে ৬০টি পদ।
এরমধ্যে ২৮ জন চিকিৎসকের স্থলে কাগজে—কলমে ১৩ জন থাকলেও সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে রয়েছেন দুইজন চিকিৎসক। ২৮ জন চিকিৎসকের ১৭টি পদ শূন্য থাকায় ১১ জন নিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। পাঁচজন ক্লিনার পদের সবকটিই শূন্য।
এছাড়া এ হাসপাতলে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংকটের পাশাপাশি রোগীদের রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা—নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির অধিকাংশই রয়েছে বিকল। রোগীকে পরীক্ষা—নিরীক্ষা দিলে তারা পড়েন বিপাকে। ছুটতে হয় বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতলে কর্মকর্তা—কর্মচারীর মধ্যে প্রথম শ্রেণী চিকিৎসকদের পদ সংখ্যা রয়েছে ২৮টি এর মধ্যে কাগজে—কলমে রয়েছে ১৩ জন। এই ১৩ জনের আবার দুইজন রয়েছেন সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে। কাগজে কলমে ১৩ জনের স্থলে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১১ জন।
দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্সদের ৩৫টি পদের মধ্যে রয়েছে ৩৩ জন। শূন্য রয়েছে দুইজন। এছাড়া চলতি বছরে কমপক্ষে আরো চারজন অবসরে যাচ্ছেন। এতে শূন্য পদের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানা গেছে। তৃতীয় শ্রেণির মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীর ১৯৬টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৬৪ জন।
শূন্য রয়েছে ৩২ জন। চতুর্থ শ্রেণির ১৯টি পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ৬ জন। শূন্য রয়েছে ১৩ জন। চতুর্থ শ্রেণীর মধ্যে ক্লিনারের পাঁচটি পদ থাকলেও সবকটি রয়েছে শূন্য। সব মিলিয়ে শূন্য পদের সংখ্যা রয়েছে ৬০টি।
তবে জনবল সংকট থাকলেও পূর্বের তুলনায় হাসপাতালে সেবার মান বেড়েছে। এ হাসপাতালে টিএইচও ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম জানান, তিনি যোগদানের পর থেকে অল্প সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সেবার মান বাড়িয়েছেন।
ফলে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে। ভর্তিরোগী ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে কোন কোন দিন ৪ থেকে ৫শতাধিক রোগীকে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
এদিকে সেবার মান বাড়লেও রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা—নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির অধিকাংশই বিকল থাকায় রোগীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। চিকিৎসকরা রোগের কোন পরীক্ষা দিলে হাসপাতালে ওৎ পেতে থাকা ভুয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন ছেঁা মেরে নিয়ে যায় ব্যবস্থাপত্র।
আশ্বাস দেয় অল্প খরচে পরীক্ষা করিয়ে দেওয়ার। কোন প্রকার পরীক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকলেও ওইসব রোগীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্লাড বা ইউরিন নেয় তারা। পরে তাদেরকে ফকিরহাটের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়া হয়। ভুয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলিতে রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি না থাকলেও রোগী ও তাদের সজনদের নজর কাড়ার জন্য পরীক্ষার ফিসসহ বিশাল তালিকা লটকানো রয়েছে। রয়েছে বড় বড় ডাক্তারের নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘকাল ধরে হাসপাতালের এক্সরে ও আলট্রাসনো মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এগুলি মেরামতের জন্য বারবার আবেদন করছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
এমনকি নতুন মেশিনেরও চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এখানে ইসিজি, ব্লাড ও ইউরিন পরীক্ষা করা হয়। তবে অফিস টাইম বেলা আড়াইটার পর কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে করা সম্ভব নয়। ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে কীট আসে আবার মাঝে মাঝে সংকট দেখা দেয়।
তবে সংকট মোকাবেলায় সিভিল সার্জন অফিসে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। কীট রয়েছে বলে খবর পেয়ে আমি নিজেই কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে শিগগির কীট আসবে।
হাসপাতাল সন্নিকটের ভুয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে বলেন, আমরা সেখানে পরীক্ষার জন্য পাঠাই না। তারা এখান থেকে জোর করে নিয়ে যায়। স্থানীয় নেতাদের তদবির থাকায় এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।