তহীদ মনি : নীতিমালা বদলে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রশ্নব্যাংকের ৪০ শতাংশ টাকা এরিয়াসহ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে সুইপার সকল স্থরের কর্মকর্তা কর্মচারিরা। প্রায় ২ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা হলেও বঞ্চিত হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ও বদলিকৃত কর্মকর্তা কর্মচারিরা। তাদের দাবি, ৭ বছরের পূরনো টাকা ভাগকালে সে সময়ে সংশ্লিষ্টদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র মতে, প্রশ্ন ফাঁস রোধ এবং প্রশ্নের গুণগত মান সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে প্রশ্ন ব্যাংক চালু করে যশোর বোর্ড। এ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক, অর্ধবার্ষিক বা এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী ও প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রশ্নব্যাংক তৈরিকালে সিদ্ধান্ত ছিল, প্রতি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী প্রতি এক সেট প্রশ্নের জন্য ১০ টাকা হারে ফি বোর্ডকে দেবে প্রতিষ্ঠান। বোর্ডে জমাকৃত টাকার ২০ শতাংশ এরসাথে সংশ্লিষ্ট সকলে ভাগ করে নেবে। বাকী ৮০ শতাংশ বোর্ড ফান্ডে জমা হবে। শুরু থেকে এ হিসেবে টাকা উত্তোলিত হলেও চলতি বছর এর ব্যতিক্রম হয়েছে।
২০ শতাংশের উত্তোলনের শর্ত বদলে করা হয়েছে ৬০ শতাংশ। অতীতে উত্তোলিত ২০ শতাংশের ক্ষেত্রেও ৬০ শতাংশ বলবদ করা হয়েছে। ফলে পূর্বের হিসেবে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ এবং বর্তমান হিসেবে ৬০ শতাংশ উত্তোলনের পর প্রায় দুই কোটি টাকা হয়। এ টাকা পদমর্যাদা অনুযায়ী বোর্ডের সবাই ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অতীতের টাকা থেকে ৪০ শতাংশ বর্তমান কর্মচারি কর্মকর্তারা ভাগ বাটোয়ারা করলেও সে সময়ে কর্মরত দের বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের কোন অংশই দেয়া হয়নি।
তাছাড়া বোর্ডের মোটা টাকা ব্যক্তির পকেটে চলে গেলেও সবাই মুখে কুলুপ এটেছে। টাকা পেয়ে কেউ কোন কথা বলছে না।
২০ শতাংশের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ করায় প্রতিষ্ঠানের লাভের চেয়ে ব্যক্তি পাওয়াকে বড় করে দেখা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোণা। বরং টাকা পেয়ে খুশির উৎসব বেশিরভাগ কর্মকর্তা—কর্মচারীর মধ্যে। এই টাকা তারা হিসেবের বাইরে অতিরিক্ত পেয়েছেন বলেও জানান অনেকে।
বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেখাযায়, প্রশ্ন বিক্রি বাবদ আয় অনেক বেড়েছে। এমতাবস্থা পূর্ব নির্ধারিত ২০ শতাংশ গ্রহণ ও ভাগাভাগির স্থলে আরও বেশি নেয়ার আকাঙ্খা জাগে কয়েকজনের। তারা বোর্ড চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দিয়ে ২০ শতাংশের পরিবর্তে আয়ের ৬০ শতাংশ গ্রহণের জন্যে অনুরোধ জানান। সে মোতাবেক বোর্ড কমিটি ও বোর্ডের অর্থ কমিটির কাছে এ প্রস্তাব তোলা হয় চলতি বছর, তা পাসও হয়। এর প্রেক্ষিতে নভেম্বর মাসে এরিয়া আকারে ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রশ্ন ব্যাংকের আয়ের বর্ধিত ৪০ শতাংশ (নিয়মিত ২০ শতাংশ ছাড়া) প্রায় ২ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা থেকে একজন ঝাড়–দার যেমন লক্ষাধিক টাকা পেয়েছেন তেমনি ২য় শ্রেণির কর্মকর্তারাও পেয়েছেন দেড়লক্ষাধিক টাকা।
কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। একজন জানান, তিনি দেড়লাখ টাকা নিয়েছেন, একজন বলেন তিনি ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা নিয়েছেন, একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী জানান, তিনি প্রায় ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। তবে টাকা পাওয়া ও নেওয়া বিষয়টি কোনোমতে স্বীকার করলেও কোনো বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি কেউ। তারা জানিয়েছেন সবাই পেয়েছেন, সবাই খুশি। একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা তো অর্থনৈতিক বিষয়, ঊর্ধ্বতনরা ঠিক করেছেন, কারো কোনো অভিযোগ নেই।
তবে এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে ২০১৬ সাল থেকে যারা বদলি হয়েছেন বা পিআরএল বা অবসরে গেছেন তাদের একটি অংশ। তাদের দাবি, এই সময়ে তারা কাজ করেছেন এবং এই টাকার তারা হকদার। তাদের মতে, মাত্র কয়েকমাস এসে অনেকেই সাত বছরের সুবিধা ভোগ করেছেন। বোর্ডে কর্মকর্তাদের মাঝে সচিব চলতি বছরের মাঝামাঝি যোগ দিলেও তিনিও প্রায় ২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এ বিষয়ে ক্ষুুব্ধ একটি অংশ বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও পাত্তা পাননি।
এ বিষয়ে সাবেক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম ও শরীফ আব্দুল্লাহ তাদের ক্ষোভ জানান। তারা জানান, ৩৭জনকে এই টাকার অংশ থেকে বাদ রাখা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে কথা বলতে গেলেও তিনি জানিয়েছেন, অতীতে যেভাবে চলেছে সেভাবে ব্যবস্থা হয়েছে। অতীতেও এ জাতীয় টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে বোর্ডে কর্মরতরাই সুবিধা নিয়েছেন, চলে যাওয়ারা পান নি, এখনো তা অব্যাহত আছে। তবে তারা এ নিয়ে আবারো চেয়ারম্যানের কাছে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে নিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা বন্টনের কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি বোর্ডের অর্থ কমিটি ও বোর্ড কমিটি অনুমোদন দিয়েছে তারপর তা পাস হয় ও গ্রহণ করা হয়। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। তিনি আরও জানান, অতীতেও বোর্ডের টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে বদলি হওয়া অথবা অবসরে যাওয়াদের বিষয়টি বাদ রাখা হয়েছে, অতীতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এই টাকা ভাগ করা হয়েছে। নতুন কোনো নিয়ম চালু হয়নি।