অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার : সুস্থ মানুষের হৃদয় প্রতিমিনিটে ৫—৬ লিটার রক্ত সারা শরীরে পাম্প করে। রক্ত এভাবে হৃদয়ে প্রসারণে ধমনির মাধ্যমে শরীরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কোষের অভ্যন্তরে পৌঁছে যায়। আর এভাবেই রক্তের মাধ্যমে তার ভেতরে থাকা অক্সিজেন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, আমরা উজ্জীবিত হই।
ঘড়ির কাঁটার মতো হৃদয় বিরামহীনভাবে চললেও কোনো একসময় ছন্দপতন ঘটে। কারণ অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলা। ফলে রক্তনালিতে ধীরে ধীরে চর্বি জমে ওঠে। বার্ধক্যে উপনীত হলে ধমনির গা ভরে ওঠে ক্যালসিয়াম ও রক্তকণিকার জমাট উপাদানে। হার্টের রক্তনালি বা করোনারি আর্টারি যেসব মাংসপেশিতে নিরবিচ্ছিন্ন রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে এতদিন অক্সিজেন জোগাত, দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেনের অভাবে সেই পেশিগুলো একসময় অকেজো হয়ে পড়ে। হার্টের মাংসপেশিগুলো নিস্তেজ হওয়ার আগেই অক্সিজেনের অভাবে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এর নাম হার্টের এনজিনার ব্যথা। এমন ব্যথা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব সংকেত বলে ধরে নেওয়া হয়।
বয়স ৬৫ বা আরও বেশি বয়সী মানুষ করোনারি হৃদরোগে মৃত্যু হয়ে থাকে। সচেতন না হলে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ আর ৫৫ বছর বয়সী নারীও এ ধরনের মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে থাকে। শুধু রক্তনালির জমাটবদ্ধতা নয়, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টকে দুর্বল করে ফেলতে পারি। হার্টের অসুখের অন্যতম কারণÑ দুশ্চিন্তা, ধূমপান, মদ্যপান, আয়েশি জীবনযাপন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, পারিবারিক হৃদরোগ ইত্যাদি। জন্মগত হৃদরোগেও হৃদযন্ত্র হার্ট ফেইলিউরের শিকার হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে জিনগত কারণে হৃৎপেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
রক্ত জমাটবদ্ধতায় এনজিনার কারণে যে বুকব্যথা হয়, তার একটি নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে। ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে হাড়ের পেছনে অনুভূত হয়। শরীর ঘেমে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা বাম হাতের ভেতর দিক বরাবর নেমে আসতে পারে। হাঁটাহাঁটি বিশেষ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এ ব্যথা আরও তীব্র হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের কোনো এক পর্যায়ে বুকব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে মাথা ও ঘাড়ে ব্যথার সমস্যার কথা রোগীরা বলেন।
সঙ্গে কিডনির সমস্যা থাকলে মুখ ফুলে যেতে পারে। অসুখ জটিল আকার ধারণ করলে হার্ট ফেইলিউর হয়ে হাত—পা ও পেটে পানি আসতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ শুধু হার্টের ক্ষতি করে না, রক্তচাপের জটিলতায় ব্রেইন স্ট্রোক এমনকি কিডনি ফেইলিউর হতে পারে। দুশ্চিন্তা এ রোগের জন্য বেশি দায়ী। তাই দুঃসংবাদ বা ভয় পেলে উত্তেজিত হবেন না। হঠাৎ করে ভয় বা দুশ্চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
হৃদয় সুস্থ রাখবেন যেভাবে : খাবারে বাড়তি লবণ খাবেন না। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। মাদক ও তামাকজাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন। হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অল্প বয়স থেকেই স্ক্রিনিং করান। মানসিক চাপ কমে বা মনে প্রফুল্লতা আসেÑ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। উচ্চ রক্তচাপ বা করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন। হৃদরোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ফুসফুসের রোগ থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা অব্যাহত রাখুন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল