২৪ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১৪৬ শিশু, মৃত্যু ৩
এস হাসমী সাজু : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোগীর ও স্বজনের ভিড়ে ওয়ার্ডে পা রাখার জায়গা নেই। শয্যা সংকটের কারনে স্বজনরা শিশুদের নিয়ে ফ্লোরে থাকছেন। রোগীকে জায়গা দিতে না পেরে রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত ৫/৭ দিন থেকে গরমের মাঝে শীত ও ঠান্ডা বাতাসের কারনে এবং ঋতু পরিবর্তন জনিত কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ ঠান্ডা জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে অধিকাংশ মানুষ তাদের সন্তাদের হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না। একেবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে বেশি।
এদিকে হাসপাতালে শিশু বিভাগে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে রোগেিদর সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা। এছাড়া হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ২৪ বেড থাকলেও শনিবার সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টায় ভর্তি ভর্তি হয়েছে ৫৪ শিশু।
ওয়ার্ডের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৪৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বের ৯২জন এবং নতুন ৫৪ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ সময় ২৩ জন শিশুকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১২৩ জন শিশু এর মধ্যে কিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (নিউ নেটাল ব্লাকে) রয়েছে ১০জন শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ব্যাপারে চিকিৎসক-সেবিকা বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
শনিবার সকালে শিশু ওয়ার্ডে তাসমিয়া সুলতানা তার দেড় বছরের শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে জানান শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মাহাবুবুর রহমান জানান, শীতের অবহাওয়া বিদায়ের পথে এছাড়াও গত ৫/৭দিন কখনো শীত কখনো গরম দেখা দেয়ায় শিশুরা জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এসব রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়। জ্বরের সঙ্গে খাবারে অরুচি থাকে এবং পালসও বেড়ে যায়। এসব শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে কোনো সমস্যা হয় না। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ জানিয়েছেন, এ সময় বাতাস শুকনো, তাই বাতাসে ধুলোবালি ছড়াচ্ছে। এছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে শিশুদের মাঝে ঠান্ডা-কাশি-জ্বর দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এ সময় শিশুদের ভাইরাসজনিত রোগ বাড়ে।
এ রোগে আক্রান্ত শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে শিশুদের ২৪ বেডের বিপরীতে মোট ১২৩জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শিশু বিভাগে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশু রোগীদের সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা। অনেক রোগীকে জায়গা দিতে না পেরে রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা।