২০শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রথম গোলের পর হামজা চৌধুরী
হামজার ছোঁয়ায় ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ জয়

ক্রীড়া ডেস্ক : ৫৫ মাসের দীর্ঘ বিরতির পর ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে যখন ফের জ্বলে উঠল ফ্লাডলাইট, তখন শুধু একখণ্ড আলো নয়—আলোকিত হলো পুরো জাতির আবেগ। ফুটবল ফিরে এসেছে তার তীর্থভূমিতে, আর সেই ফেরার ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখলেন এক ‘নতুন বাংলাদেশি’—হামজা চৌধুরী। দর্শকের কণ্ঠে ধ্বনি—‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’ সেই পুরোনো দিনের সুর যেন আবার ধ্বনিত হলো ঢাকার আকাশে। ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফুটবলের নিজ ভূমিতে ফেরার ক্ষণটাও হয়ে থাকল স্মরণীয়।

ম্যাচের মাত্র ৬ মিনিট, কর্নার নিতে এগিয়ে গেলেন জামাল ভূঁইয়া। ভুটানের রক্ষণে খেলোয়াড়দের ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে হামজা চৌধুরী নামের এক সাহসী যোদ্ধার নিখুঁত হেড, বল ছুঁয়ে গেল ভুটানের জাল। সেই সঙ্গে স্টেডিয়ামের বুক কাঁপানো গর্জন—এ যেন বহুদিন পর পাওয়া হারানো কিছু ফিরে পাওয়ার উল্লাস!

ইংল্যান্ডে জন্ম, লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের রঙিন জার্সি গায়ে চাপিয়ে ৫৭টি ম্যাচে খেলে ক্যারিয়ারের মাত্র একটি গোল করেছেন। বাংলাদেশের হয়ে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ, আর তাতেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে ফেললেন এই মিডফিল্ডার। জাতীয় দলের জার্সিতে পেলেন নিজের প্রথম গোল।

গোল হজম করে কেমন যেন দিশেহারা ভুটান। আর গ্যালারিতে এক অন্য রকম উন্মাদনা। মাঠে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক, আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। ৩২ মিনিটে অভিষিক্ত ফাহামিদুল ইসলাম বাঁ দিক দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ রক্ষণে। তাঁর শট ফিরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর জামালের শটও ঠেকালেন তিনি। তবে বল দখল, গতি ও আগ্রাসনে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকেরা। ভুটান প্রতি আক্রমণে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে।

বাংলাদেশ খেলেছে অনেকটা ওপরে উঠে, যেন হারিয়ে যাওয়া আক্রমণাত্মক ফুটবলের গন্ধ পাওয়া গেছে আবার। হামজা ছিলেন প্রায় প্রতিপক্ষের অর্ধ জুড়ে। রক্ষণে তাঁর কাজ তেমন লাগেনি, বরং মাঝমাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের একাদশে আজ ছিল অভাবনীয় এক বৈচিত্র্য—পাঁচ প্রবাসী ফুটবলার একসঙ্গে! জামাল, হামজা, ফাহামিদুল, কাজেম, আর তারিক। রক্ষণে দুই ভাই—সাদ ও তাজ উদ্দিন। কিন্তু প্রথমার্ধে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব চোখে পড়েছে। তাই দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই তিন বদল আনেন কোচ কাবরেরা। তুলে নেন হামজা, জামাল ও কাজেমকে। নামান হৃদয়, মোরছালিন ও ইব্রাহিমকে। সামনে ১০ জুন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ম্যাচ, তাই সতর্কতাই শ্রেয়।

আর এই বদল যেন আনল আরেক উৎসব। ৪৮ মিনিটে সোহেল রানার ২৫ গজ দূরের ঝোড়ো শট জাল কাঁপিয়ে দিল ভুটানকে। এরপর রাকিব হোসেন গোলের সামনে বল পেলেও একটু বাইরে মারেন। ৬০ মিনিটে রাকিব ও ফাহামিদুলকে তুলে আল-আমিন ও ফাহিমকে নামান কোচ। ফাহামিদুল বাঁ দিকের উইং ধরে যতটা খেলেছেন, খারাপ বলা যাবে না। প্রথম ম্যাচ হিসেবে পাশ নম্বর নিয়ে পাবেন।

তবে ম্যাচ ব্যবস্থাপনায় পাশ নম্বর পাবে না বাফুফে। ম্যাচের বাইরের গল্পটা যে ম্যাচ জয়ের মতো ততটা আনন্দের নয়। হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের পাশের গেটে ভিড়, ঠেলাঠেলি, অতঃপর ধৈর্য হারিয়ে কিছু দর্শক ফটক ভেঙে ঢুকে পড়েন। টিকিট হাতে থেকেও অনেকে প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ, হতাশ। এই বিশৃঙ্খলায় ম্যাচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানেই তো উদ্‌যাপন, সেখানে ব্যবস্থাপনাই যদি মুখ থুবড়ে পড়ে, তাহলে ফুটবলের জয়গান কোথায়?

ম্যাচ সত্তর মিনিট পেরোনোর পর ঘটল আরেক বিস্ময়। খেলা চলছে হালকা মেজাজে। অনেকটা একপেশেই। হঠাৎ এক দর্শক গ্যালারির বেড়া পেরিয়ে মশাল প্রান্তে ছুটে এলেন বাংলাদেশের ডাগ আউটে! তাদের চোখে উন্মাদনা, মুখে উচ্ছ্বাস। উদ্দেশ্য একটাই—হামজা চৌধুরীর সঙ্গে ছবি তোলা! নিরাপত্তা কর্মীরা ছুটে এসে তাঁকে সরিয়ে নিলেও মুহূর্তটি ছিল সিনেমার দৃশ্যের মতো। ইউরোপের মাঠে এমন দৃশ্য আকছার দেখা যায়, কিন্তু বাংলাদেশে নয়। বাংলাদেশের ফুটবল যে এখন নতুন এক আশার বাতি জ্বলছে, এই অনাকাঙ্ক্ষিত অথচ আবেগতাড়িত ঘটনাই যেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

শেষ দিকে একবার যেন নিশ্বাস আটকে গিয়েছিল স্টেডিয়ামে। ভুটান পেয়ে গিয়েছিল একটি দুর্দান্ত সুযোগ। কিন্তু গোলরক্ষক মিতুল মারমা ছিলেন প্রস্তুত। তারপর... শেষ বাঁশি। স্কোরবোর্ডে স্পষ্ট—বাংলাদেশ ২, ভুটান ০। ফাহামিদুল প্রেসবক্সের প্রান্তে ফাহামিদুল তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।

গ্যালারিতে তখন গর্জন। আজ জয় শুধুই গোলের নয়। অনেক অপেক্ষার এক জয়। ২১ হাজার দর্শক ক্ষমতার স্টেডিয়ামে হাজার পনেরো দর্শক এলেন। তাঁদের সামনে রাতটা শুধুই একটা ম্যাচ নেয়—এ ছিল ফুটবলের ফিরে পূনর্জাগরণেরও। দীর্ঘ ৫৫ মাসের নির্জনতাকে ছাপিয়ে আবার আলোকিত হলো জাতীয় স্টেডিয়াম। ফিরে এল সেই পুরোনো দিনের আলো, সেই হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস, সেই আরাধ্য উল্লাস।

‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’

বাংলাদেশ দল:

মিতুল মারমা, সাদ উদ্দিন, তপু বর্মণ, তাজ উদ্দিন, তারিক কাজী, সোহেল রানা, হামজা চৌধুরী (রিদয়), ফাহামিদুল ইসলাম (ফাহিম), জামাল ভূঁইয়া (মোরছালিন), কাজেম শাহ ( ইব্রাহিম) ও রাকিব হোসেন ( আল আমিন)। ব্র্যাকেটে বদলি খেলোয়াড়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram