নিজস্ব প্রতিবেদক : রোজার শুরুর আগেই ছিট কাপড়ের দোকানে শুরু হয় ঈদের বেচাকেনা। রোজা শুরুরর পর পরই বড় বড় টেইলার্সে ‘অর্ডার নেয়া বন্ধ’ নোটিশ টানানো হয়। চলতি বছরের চিত্র একেবারে ভিন্ন। মানুষ বাজারে আসছে, তবে দেখেশুনে দাম যাচাই-বাছাই করে চলে যাচ্ছে। ছিট কাপড় দোকান মালিকরা বলছেন, এত খারাপ অবস্থা করোনাকালেও ছিল না।
প্রতি বছরেরমত এ বছর রমজানের শুরু থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সাধ্যমত নিজের ও সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে বাজারে আসছেন। ঈদ বাজারে শুরুর দিকে ভিড় থাকে কাপড়ের দোকানে। ছিট কাপড় কিনে টেইলার্স থেকে পোশাক বানাতে সময় লাগবে তাই তাড়াহুড়া থাকে। এবারও মানুষ বাজারে আসছে। তবে ভিড় তুলনামূলক কম। যে বেচাকেনা হচ্ছে তা বিক্রেতারা খুশি হতে পারছেন না।
ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ছিট কাপড়ের দাম বেশি। কাপড় পছন্দ হলেও দাম পকেটের সাথে মিলছে না তাই কিনতে যেয়ে ভাবতে হচ্ছে তাদের।
বিক্রেতারা জানান, প্রতি গজ প্রকার ও গুণগত মান ভেদে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। যে কারণে তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
যশোর বড়বাজারের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকার ছিট কাপড়ের দোকান গুলোতে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও বেচাকেনা সে ভাবে হয়নি। অনেকে কেনাকাটা করলেও দাম নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর দেশি কাপড়ে ৪০ শতাংশ ও বিদেশি কাপড়ে ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ দাম বেড়েছে। কোনো কোনো কাপড়ের ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে তিনগুণ ।
যশোর বড়বাজার ছিট বিতানের বিক্রয় প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম বলেন, রমজান উপলক্ষে প্রতি বছর যে বেচাকেনা থাকে সে তুলনায় এবার খুবই খারাপ। প্রতিটি কাপড়েই ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। বিদেশি শার্ট-প্যান্টের পিসে গজ প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। পায়জামা-পাঞ্জাবির কাপড়ের গজ প্রতি প্রকার ও মানভেদে বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। মেয়েদের দেশি-বিদেশি সালোয়ার কামিজের কাপড়েও বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, পাইকার বাজার থেকে বলা হচ্ছে, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সুতা উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবহন খরচ সবমিলে কাপড়ের বাজারে প্রভাব পড়েছে।
যশোর বড় বাজারে কথা হয় শহরের মিশনপাড়া এলাকার বাসিন্দা সানজিদা ইসলাম এ্যানির সাথে তিনি জানান, থ্রি-পিস বানানোর জন্য ছিট কাপড়ের দোকানে এসেছি। কিন্তু দাম বেশি। থান কাপড়ের পরিবর্তে তাই থ্রি-পিস কিনে নিয়েছি।
লতিফ ক্লথ স্টোরের বিক্রয় প্রতিনিধি সাজিদুল হাসান মিন্টু বলেন, রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই ছিট কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। মানুষ বাজারে আসছে বটে। তবে দেখেশুনে দাম যাচাই-বাছাই করে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর দেশি কাপড়ের দাম ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ আর বিদেশি কাপড় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দাম বেড়েছে পাঞ্জাবির কাপড়ের। কোরিয়ান মাইক্রো পাঞ্জাবির সুতি কাপড়ের দাম আগে গজপ্রতি ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। ১১০ টাকার দরে কাপড় বিক্রি হচ্চে গজপ্রতি ১৬০ টাকা।
একই কথা বলেন, মডার্ন ক্লথ স্টোরের ম্যানেজার হারান মজুমদার। তিনি বলেন, সব ধরনের ছিট কাপড়ের দাম বেড়েছে। তবে বিদেশি গর্জিয়াস কিছু আইটেম আছে সেসব কাপড়ের দাম গজপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এলসি সমস্যার কারণে এসব কাপড়ের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।