১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্বামীকে হত্যার আড়াই বছর পর ধরা স্ত্রী
স্বামীকে হত্যার আড়াই বছর পর ধরা স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০ সালের ৫ জুলাই বুড়িগঙ্গা নদীর পোস্তগোলা ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার হয় এক যুবকের লাশ। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে জানা যায় লাশটি যশোরের চৌগাছা উপজেলার আসলাম হোসেনের। ৩১ মাস পর জানা গেল আসলামের হত্যাকারী তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা কণা।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের এ নারীর তৃতীয় স্বামী ছিল আসলাম। হত্যার পর থেকে কণা ছিলেন আত্মগোপনে। দীর্ঘদিন নিজেকে লুকিয়ে রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল অভয়নগর থেকে তাকে আটক করেছে। আটকের পর কণা হত্যার দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন, স্বামীর সম্পদের লোভে তিনি এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন।


পুলিশ বলছে, টাকা ওয়ালা যুবকদের টার্গেট করে প্রথমে বিয়ে পরে সম্পদ কেড়ে নিয়ে হত্যা করা ছিল তার নেশা। তার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।


র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, যশোরের চৌগাছা উপজেলার কারিকরপাড়া গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে আসলাম কখনো মাদক, আবার কখনো মাছের ব্যবসা করতেন । জীবনে একাধিক বিয়ে করলেও কোন সন্তানের পিতা হতে পারেননি তিনি। শেষমেষ কেরানীগঞ্জের মেয়ে উম্মে হাবিবা কণাকে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছিলেন।

স্ত্রী কণারও ছিল একাধিক বিয়ে। টাকা ওয়ালা যুবকদের টার্গেট করে বিয়ে করতেন কণা। আসলাম ছিলেন তার তৃতীয় স্বামী। আসলামের আগে কণা কুমিল্লার ডালিম হোসেন নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। আসলামের সংসারে থাকলেও ডালিমের সাথে তার মেলামেশা বহাল ছিল।

যে কারণে ডালিমের ঔরষে কণার গর্বে সন্তান আসে। বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে চাননি আসলাম। এরই মধ্যে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন কণা। ফলে শুরু তাদের দুইজনের মধ্যে বাকযুদ্ধ। তার সেই যুদ্ধে জয়ী হতে আসলামকে খুনের পরিকল্পনা করেন ডালিম ও কণা।

২০২০ সালের ৫ জুলাইয়ের আগে যে কোন দিন ডালিম ও কণা একত্রে শ্বাসরোধে হত্যা করেন আসলামকে। এরপরে লাশটি বস্তা ভর্তি করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। ৫ জুলাই বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানগঞ্জ থানার হাসনাবাদ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহবুবুর রহমান বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বস্তা ভর্তি সেই লাশ উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা লাশ ও অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়।

মামলাটি একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও পরিচয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার পরিচয় জানা যায়। কিছুদিন আগে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর শুরু হওয়া তদন্তে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকে ক্লু। এই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ থানার এসআই নাসির উদ্দিন জানান, তিনি আটক করেন কণার মা আয়শা বেগম ওরফে হাওয়াকে। আয়শার কাছ থেকে সন্ধান পাওয়া যায় ডালিমের। ডালিমকে কুমিল্লা থেকে আটকের পর হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী কণা বলেও জানা যায়। ফলে কণাকে আটকের জন্য পুলিশ বিভিন্নস্থানে অনুসন্ধান শুরু করে।

সর্বশেষ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কণাকে গতকাল বুধবার সকালে যশোরের অভয়নগরের বুইকারা শিমুলতলা আবুল মুন্সির বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব।
এদিনই সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, ২০২০ সালের ৫ জুলাই ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় মৃত ব্যক্তি যশোরের চৌগাছা উপজেলার পশ্চিম কারিকরপাড়ার আসলাম হোসেন। এ ঘটনায় নৌ পুলিশ বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা মামলা দায়ের করে।
এরপর থেকে র‌্যাব এই মামলার ছায়া তদন্ত করে আসছিলো। তদন্তে এই হত্যাকা-ে আসলামের স্ত্রী উম্মে হাবিবা কণা এবং কণার দ্বিতীয় স্বামী ডালিম হোসেনের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। কুমিল্লার বাসিন্দা ডালিমকে পরে পুলিশ আটক করে। ডালিম পুলিশের কাছে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানায় কণা যশোরে আত্মগোপন করে আছে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে র‌্যাব জানতে পারে আসলামের স্ত্রী উম্মে হাবিবা কণা যশোরের অভয়নগরে আত্মগাপনে রয়েছে। এরপর বুধবার সকালে অভয়নগরে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর কণা তার স্বামীকে হত্যার বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছে। তিনি জানিয়েছেন টাকা পয়সা আত্মসাতের জন্য একাধিক বিয়ে করেছেন। আসলাম তার তৃতীয় স্বামী। টাকা পয়সা আত্মসাতের পর দ্বিতীয় স্বামীর সহযোগিতায় আসলামকে হত্যা করে লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হয়। র‌্যাব অধিনায়ক আরো জানান, আটককৃত আসামিকে কেরাণীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।


এর আগে এই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাসির উদ্দিন বলেন, লাশ উদ্ধারের পরই ডালিম এবং কণা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। যে কারণে কণার মা আয়শা বেগম ওরফে হাওয়া বেগমকে আটক করা হয়। এর পরে সেখান থেকে অন্যাত্র বদলী হওয়ায় তিনি মামলাটি হস্তান্তর করে চলে যান।


এই মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি ৬ নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা। তবে তিনি তদন্তকালে জানতে পেরেছেন, আটক কণা অর্থলোভী। যে কারণে তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। তাছাড়া আসলামের সাথে সংসার করাকালে ডালিমের সাথে পরকিয়া করে অবৈধভাবে একটি সন্তানের জন্ম দেন। ওই সন্তানের বিষয় নিয়ে কণার সাথে পারিবারিক বিরোধ হলে আসছিল। তারই অংশ হিসেবে আসলামকে খুনের পরিকল্পনা এবং ডালিমের সহযোগিতায় বাস্তাবায়ন করা হয়েছে।

অবশ্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কণার পূর্বের স্বামীর অবৈধ সন্তান আসলাম স্বীকৃতি না দেয়ায় এই খুন হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram