১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অস্বাভাবিক শীত
95 বার পঠিত

এবার শীত একটু দেরিতেই কামড় বসাতে শুরু করেছে। মাঘ আসার কয়েকদিন আগে থেকে শীতে চুয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি জেলায় জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এরআগে চলতি মৌসুমেই সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি মেলসিয়াস হয়েছিল। কিন্তু সে সময় শীতের তীব্রতা ছিল কম। বর্তমানে সর্বনিম্ন ও সবোর্চ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য মাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়া, দিনে সূর্যের আলো কম সময়ের জন্য পড়া, বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়া এবং ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ছে।

আবহাওয়াদিরা জানান, আকাশ থেকে পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। যত বেশি সময় সূর্য কিরণ দেবে, ভূপৃষ্ঠ তত বেশি উত্তপ্ত হবে এবং রাতে এই তাপ বিকিরণ (বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়বে) হবে। রাতে তাপ বিকিরণ হলে রাতের তাপমাত্রা বাড়বে এবং রাতেও শীতের অনুভব কমে আসবে। কয়েক দিন ধরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারছে না, ফলে তাপমাত্রা না কমলেও শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পুরো জানুয়ারি জুড়েই শীতের প্রকোপ থাকবে।

শীতে কিছু বিপদ সম্পর্কে সতর্ক ও সাবধান না হলে মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। শীতবস্ত্রের অভাবে প্রচন্ড শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পায়। সর্দি—কাশি থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে। আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধের দুর্ঘটনাও ঘটে। গত শুক্রবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ জবা রানী (৭৫) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

মানুষের শীতের কষ্ট শুরু হয় নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে। চলে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় কয়েকবার। যখন শৈত্যপ্রবাহ চলে, তখন জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়ে যায়; বিশেষভাবে কষ্ট পায় শিশু ও বয়স্ক মানুষরা। যেসব শ্রমজীবী মানুষ খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন, তারা বেশ বিপাকে পড়ে যান। উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা থেকে বয়ে আসে হিমশীতল বাতাস। দিনের বেলা কখনো সূর্যের দেখা মেলে, কখনো মেলে না। যখন আকাশে সূর্য থাকে, তখনো রোদের তীব্রতা থাকে না। রাতে বেশ ঘন হয়ে প্রায় বৃষ্টির মতো ঝরে শিশির। দ্বিপ্রহর পর্যন্ত থাকে ঘন কুয়াশা। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষের পক্ষে এ মাত্রার শীতে অভ্যস্ত হওয়া কঠিন। বাসস্থান শীত আটকানোর উপযোগী নয়; পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের নিশ্চয়তা নেই বিপুলসংখ্যক মানুষের। শ্রমজীবী মানুষের কাজের পোশাক শীত নিবারণের উপযোগী নয়। তাছাড়া দারিদ্র্য ও পুষ্টির অভাব যেসব পরিবারে বেশি, শীত তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হয়ে আসে।

শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের মানবিক উপায় রয়েছে। সেটা হলো সরকািারÑবেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ। অনেক বেসরকারি সংস্থার এমন উদ্যোগ চলমান। তবে তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মানুষ মানুষের জন্য। শহরাঞ্চলে ভাসমান মানুষ দেখা যায় প্রচন্ড শীতের ভেতর ফুটপাতে শুয়ে আছে। খোলা আকাশের নিচে এভাবে থাকাটা বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। শীত ও বৃষ্টির ভেতর ভাসমান গৃহহীন শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা লাঘবে সমাজ যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সেটি হবে চূড়ান্ত অমানবিকতা। তাই শীতে শুধু নিজেকে না বাঁচিযে আশপাশের বিপন্ন মানুষকে বাঁচানোর জন্য মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সেক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের কাছে বয়স্কদের প্রত্যাশা বেশি। শীতগ্রস্ত জবুথবু সময়ের ভেতর বহু মানুষের দুর্দশা লাঘবে পরিবার, সমাজ, তথা রাষ্ট্রের দায় রয়েছে। অবিলম্বে শুরু হোক শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কার্যক্রম।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram