১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্কোয়াশ চাষে সফল কৃষক মাহবুব

কামরুজ্জামান, বাগেরহাট : বাগেরহাটের কৃষক মাহবুব স্কোয়াশ চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এই স্কোয়াশ এটি বিদেশি সবজি। বিগত কয়েক বছর দেশের উত্তারঞ্চলে বিদেশি সবজি স্কোয়াশের চাষ হচ্ছে। বাগেরহাটে এই প্রথম মোরেলগঞ্জের আলতী বুরুজ বাড়ি গ্রামের কৃষক মাহবুব স্কোয়াশের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এটি দেখতে অনেকটা শসার মতো। স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। এর পাতা ও কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে এ সবজি।

<< আরও পড়তে পারেন>> গোলাপে রেকর্ড দাম, তবুও শঙ্কায় কৃষক!

স্কোয়াশ হার্টের যত্নে উপকারী—হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায় হলুদ স্কোয়াশ। এতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল নেই বললে চলে। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম হার্টের জন্য উপকারী। ওজন কমাতে— গ্রীষ্মকালীন স্কোয়াশ স্থূলতারোধে বিশেষ উপকারী। এতে ক্যালোরির আধিক্য নেই। ক্যানসার প্রতিরোধে—স্কোয়াশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের ফ্রি র‌্যাডিকেলস দূর করে। এর বেটাক্যারোটিন ক্যান্সারের ক্ষতিকর পদার্থ থেকে দূরে রাখে আমাদের।

বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে— স্কোয়াশে থাকা ভিটামিন সি অকালে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। মজবুত হাড়—স্কোয়াশের ম্যাঙ্গানিজ মজবুত হাড় গঠনে সহায়তা করে। এটি স্পাইনালের জন্য বিশেষ উপকারী। চোখের যত্নে— এতে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন ও লুটেইন। লুটেইন চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সহায়তা করে।

এক কাপ স্কোয়াশে ২৪০০ মাইক্রোগ্রাম লুটেইন রয়েছে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়— স্কোয়াশের ভিটামিন সি ইমুইন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আঁশের চমৎকার উৎস এই সবজিটি। ফলে হজমশক্তি বাড়ে, যা অনেক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ— ভিটামিন মি’, এ’, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, কপার, রিবোফ্লাবিন, ফসফরাস,ক্যারোটিনয়েডস, বেটা—ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি রয়েছে। ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে— রক্তে চিনির মাত্রা বাড়তে দেয় না স্কোয়াশ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে— এই সবজিতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম রয়েছে।

এই খনিজপদার্থটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।অ্যাজমা প্রতিরোধ করে— বেটা ক্যারোটিন এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আগেই জেনেছেন, স্কোয়াশে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাজমা ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এই খাবারটি। ত্বকের যত্নে— চকচকে উজ্জ্বল ত্বকের জন্য স্কোয়াশ একটি অনন্য খাবার। একই সঙ্গে ত্বকের নানা সমস্যাও দূর করে এটি। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। চুলের জন্যও ভীষণ উপকারী।

স্কোয়াশের লতা কুমড়ার লতার মতো গাছের কান্ড। গাছের প্রতিটি পাতার গোড়ায় থাকে স্কোয়াশ। একেকটি স্কোয়াশের ওজন এক থেকে দেড় কেজির মতো। একটি স্কোয়াশ গাছে গড়ে ১৫—২০ কেজি ফল হয়। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ১৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। মুনাফা হয় ৬০—৭০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে সবজি যেমন চাহিদা রয়েছে, বিভিন্ন সুপার শপে এর চাহিদা অনেক। স্কোয়াশ রান্না করেও খাওয়া যায় তবে এটি সালাত হিসেবে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার আলতিবুরুজবাড়ীয়া গ্রামের প্রবাশী ফেরত উদ্যোমী কৃষক মাহবুবুর রহমান বাগেহাট জেলায় প্রথম বিদেশী স্বাস্থ্য উপকারী স্কোয়াশ এ সবজির চাষ শুরু করেছেন। তিনি এ চাষে সফলতা পাচ্ছেন। তার এই বিদেশী স্কোয়াশ এ সবজির চাষ দেখে আগ্রোহী হয়ে একই গ্রামের আরো কয়েকজ কৃষক স্কোয়াশ চাষ শুরু করেছেন।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এটি শীতকালীন সবজি। স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে—দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হয়। শীতকালীন সবজি হিসেবে চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর—অক্টোবর মাসে এর বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরে জমিতে এ বীজ রোপণ করা হয়।

বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে। ৩৫—৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০—১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই মাস। দেশের উত্তারঞ্চলে স্কোয়াশের বেশি চাষ হলেও বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় এই প্রথম স্কোয়াশের চাষ শুরু হয়েছে ।

আলতিবুরুজবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি বিগত কয়েক বছর দুবাই ছিলাম।দুবাই থাকাকালীন আমি স্কোয়াশ খেয়েছি। দেশে আশার ইউটিউব দেখে মোরেলগঞ্জ কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে ৩০ শতক জমিতে প্রথম স্কোয়াশের চাষ শুরু করি এবং ভালো ফলন পাচ্ছি। আমিও নিজে খাচ্ছি এবং স্থানীয় বাজারে ৫০—৬০ কেজি দরে বিক্রি করছি। আমার দেখাদেখি আমাদের গ্রামে আরো দুই—তিনজন এই স্কোয়াশ চাষ শুরু করেছে।

স্থানীয় কৃষক জাহিদুল শিকদার বলেন, আমি মাহবুবুর রহমান ভাইয়ের এই স্কোয়াশ চাষ দেখে আগ্রহী হই। মোরেলগঞ্জ কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে আমি ১০ শতক জমিতে চাষ শুরু করেছি। আমার দুইশত গাছ হয়েছে। আমার এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গাছে ভাল ফলনও পাচ্ছি। আমি ৩০—৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করি।

মাদ্রাসা থেকে অবসরপ্রাপ্ত জয়নাল আবেদিন খান বলেন, প্রথম বিদেশী সবজির ‘স্কোয়াশ’ এ চাষ শুরু করেছি। এ বছর অল্প জমিতে করেছি। ফলনও ভাল পাচ্ছি। স্থানীয় বাজারেও চাহিদা রয়েছে। স্কোয়াশ একটি লাভজনক সবজি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে বিদেশী স্কোয়াশ চাষ করবো। আমাদের দেখাদেখি এ এলাকার আরো অনেক কৃষক স্কোয়াশ চাষে আগ্রোহী হচ্ছে। এ এলাকায় আগামীতে আরো অনেক কৃষক স্কোয়াশ চাষ করবে।

মোরেলগঞ্জ উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, মাহবুবুর রহমান একজন আদর্শ চাষী। তার উৎসাহে কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়েছি।

জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাট, কৃষিবিদ আব্দুল¬াহ আল—মামুন বলেন, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার আলতিবুরুজবাড়ীয়া গ্রামের প্রবাশী ফেরত উদ্যোমী কৃষক মাহবুবুর রহমান বাগেরহাট জেলায় প্রথম বিদেশী স্কোয়াশ এ সবজির চাষ শুরু করেছেন। তিনি এ চাষে সফলতা পাচ্ছেন। মোরেলগঞ্জ কৃষি অফিস তাকে সব ধরনে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। তার দেখা দেখি ঐ এলাকায় স্কোয়াশ চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram