২৮শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সৌন্দর্য, ইতিহাস ও রোমাঞ্চের শহর তাইফ
সৌন্দর্য, ইতিহাস ও রোমাঞ্চের শহর তাইফ

সৌদি আরবের অন্যতম মনোরম শহর তাইফ। এটি পরিচিত গোলাপের শহর নামে। এখানকার গোলাপের খেত, মনোরম পাহাড়ি আবহাওয়া, ঐতিহ্যবাহী বাজার, আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র—সব মিলিয়ে এক অনন্য ভ্রমণের স্বাদ দেয়। তাইফ শহর তার শীতল আবহাওয়ার কারণে রাজপরিবার এবং সাধারণ সৌদি নাগরিকদের গ্রীষ্মকালীন আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত।

শহরটি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো, অন্যদিকে ইতিহাস ও আধুনিকতার মিশেলে এটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য। আল-হাদা ও আল-শাফা পর্বত, ওয়াহবা গহ্বর, গোলাপখেত আর সুগন্ধির কারখানা—এগুলো শহরটিকে সৌদি আরবের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
আল-শাফা পর্বত: মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে নেই মানা

তাইফ শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল-শাফা পর্বত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৫০০ মিটার উঁচু। আল-শাফা পর্বত ওকবা আল-মুহাম্মাদিয়া সড়কের মাধ্যমে মক্কার সঙ্গে যুক্ত। এই পর্বত থেকে সারাওয়াত পর্বতমালার দৃশ্য দেখা যায়। পর্বতমালাটি প্রায়ই সাদা কুয়াশায় ঢাকা থাকে এবং চারপাশে ভাসে সুগন্ধি জুনিপার গাছের সুবাস। এটি প্রকৃতিপ্রেমী এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। এখানে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় উষ্ণ আভা আর সোনালি আলোয় মুড়ে দেয় পুরো পাহাড়। এখানকার উর্বর উপত্যকা আর ডালিম, আঙুর ও ডুমুরের বাগান মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই পাহাড়ি এলাকায় প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর গ্রাম ও দুর্গ দেখা যায়।
আল-শাফা পর্বতের সর্পিল রাস্তা রোমাঞ্চকর ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা দেবে। যাঁরা পাহাড় আরোহণ করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে এই পাহাড়ের চূড়াগুলো। ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে রাতের বেলা বসে চা আর ভাজা ভুট্টার স্বাদ নিতে নিতে চাঁদের আলোয় এখানে পাহাড় দেখা যায়। এ ছাড়া পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে বারবিকিউ উপভোগ করা যায়।

আল-হাদা পর্বত: রোমাঞ্চপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য

আল-হাদা পর্বত সৌদি আরবের বিখ্যাত পর্বতগুলোর একটি। এটি ৮৭ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এটি তাইফ ও মক্কার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। এই পাহাড়ি রাস্তা ধরে যত এগিয়ে যাওয়া যায়, তাপমাত্রা ততই ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

এক হাজার বছরের বেশি পুরোনো এই রাস্তা একসময় ‘দারব আল-জাম্মালাহ’ নামে পরিচিত ছিল। সে সময় এই পথ ধরে চলে যেত বাণিজ্যিক উটের কাফেলা।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ১৭৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত আল-হাদা পর্বতে জুনিপার, আকাসিয়াগাছ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদ। রাস্তার পাশে রয়েছে ছোট ছোট দোকান। সেসব দোকানে তাইফের বিখ্যাত গোলাপজল, তাজা ফল, গরম পানীয় এবং স্থানীয় বিভিন্ন খাবার বিক্রি হয়। এখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো আল-কার পর্যটন গ্রাম। এতে রয়েছে রাইড, গাড়ির রেসিং ট্র্যাক এবং উত্তেজনাপূর্ণ ‘ফ্লাইং কার্পেট’ রাইড। যাঁরা কিছুদিন এখানে থাকার পরিকল্পনা করবেন, তাঁদের জন্য পাহাড়ের কোলে অবস্থিত বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সেগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খাবার উপভোগ করা যায়।

ওয়াহবা গহ্বর: প্রকৃতির বিস্ময়

তাইফ থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সৌদি আরবের অন্যতম বিস্ময়কর স্থান ওয়াহবা গহ্বর। এটি আসলে বিশাল এক আগ্নেয়গিরির গহ্বর। এর ব্যাস ৩ হাজার মিটার এবং গভীরতা ৩৮০ মিটার। আল লুহায়ান, উম্ম রিলান ও জাবনা পর্বত দিয়ে ঘেরা এই গহ্বর ভূতাত্ত্বিক ও অভিযাত্রীদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। এখানকার অদ্ভুত গঠনের শিলা এটিকে রহস্যময় করে তুলেছে। যাঁরা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য ওয়াহবা গহ্বরের নিচে নামার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। গহ্বরের পাদদেশে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক লবণের গম্বুজ। সূর্যের আলো পড়লে এটি ঝলমল করে ওঠে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এখানে কালো আগ্নেয় শিলা দিয়ে নির্মিত দর্শনীয় পয়েন্ট, পর্যটন কেন্দ্র এবং ডিজিটাল প্রদর্শনী হল রয়েছে।
গোলাপখেত ও সুগন্ধি কারখানা

বসন্তে পুরো তাইফ গোলাপের সুবাসে ডুবে থাকে। এখানকার গোলাপ শুধু সৌন্দর্য নয়, বরং সৌদি আরবের অর্থনীতির অন্যতম উৎস। বিভিন্ন উৎসবে এখানে শিশুদের মাথা গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়। তাইফের গোলাপভিত্তিক পণ্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশেষ করে এর গোলাপজল ও সুগন্ধি। দর্শনার্থীদের এখানে এসে রাশিদ আল কুরাশি কারখানায় গোলাপ থেকে সুগন্ধি তৈরির পদ্ধতি দেখার সুযোগ রয়েছে। এই কারখানাগুলোতে সুগন্ধি, সাবান ও ময়শ্চারাইজার তৈরি করা হয়। দর্শনার্থীরা এখান থেকে এই বিশেষ পণ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। বিশেষত রমজান ও হজ মৌসুমে এই সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়।

তাইফের ঐতিহ্য ও খাবার

তাইফ শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়; বরং এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার ও হোটেল রিসোর্টও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাইফের অন্যতম বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে রুটি ও মাংসের বিশেষ মিশ্রণে তৈরি মাফরুক, সুগন্ধি চাল ও মাংস দিয়ে তৈরি মেন্দি এবং তাইফের বিশেষ

মধু ও খেজুর। শহরটিতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে। সেগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক খাবার পাওয়া যায়।

যাঁরা প্রকৃতির সান্নিধ্য, ইতিহাসের ছোঁয়া আর রোমাঞ্চ চান, তাঁদের জন্য আল-শাফা ও আল-হাদা পর্বতের সৌন্দর্য, ওয়াহবা গহ্বরের বিস্ময় এবং গোলাপ বাগানের সুবাস এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। তাইফ শুধু একটি শহর নয়; এটি সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও রোমাঞ্চের এক অসাধারণ মিশ্রণ।

_মনজুরুল ইসলাম

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram