সমাজের কথা ডেস্ক : গ্রিসের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ও দেশের শ্রম ঘাটতি কমাতে নতুন করে আরও ৩০ হাজার অবৈধ প্রবাসীকে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার দেশটির আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
শ্রম ঘাটতির কারণে কয়েক বছর ধরে গ্রিসের বেশকিছু খাতে কর্মী সংকটে ভুগছে সরকার। বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক আলবেনীয় নাগরিক পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশে চলে যাওয়ায় অচল অবস্থায় পড়েছে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি অঘোষিত বা চুক্তি ছাড়া চাকরির সুযোগ বন্ধ করতে এবং জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৃতীয় দেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ধরনের রেসিডেন্স পারমিটের ঘোষণা দিয়েছে এথেন্স।
গত শুক্রবার দেশটির দুটি মন্ত্রণালয় যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া সংশোধনীও প্রকাশ করা হয়েছে। গত রবিবার ইনফোমাইগ্রেন্ট তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করে। নতুন সিদ্ধান্তে দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ প্রবাসী যারা দীর্ঘদিন ধরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস করছেন এবং চুক্তি ছাড়া চাকরিতে যুক্ত আছেন, তারা নিবন্ধিত হয়ে বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে পারবেন।
বৈধতা আবেদনের শর্ত
গ্রিস সরকারের বৈধকরণের নতুন সিদ্ধান্তে কারা কারা বৈধতা পাবেন, সেটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করে একজন ব্যক্তি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
১. চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর বা এর আগে দেশটিতে কমপক্ষে তিন বছর ধরে বসবাস করছেন।
২. নিয়োগকর্তার চাকরি প্রস্তাবের চুক্তি জমা দিতে হবে। যেখানে কর্মী বৈধতার পর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
৩. কোনো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত না হওয়া।
৪. একটি পাসপোর্টের কপি। কারও পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকলে আগের কপি জমা দিয়ে প্রাথমিকভাবে আবেদন করতে পারবেন।
তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট
এ নিয়মের আওতায় একজন ব্যক্তিকে তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট প্রদান করা হবে। আবেদনকারীর স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানরা ৩০ নভেম্বরের আগে গ্রিসে আসলে তাদেরও বৈধতা প্রদান করা হবে। তবে বৈধকরণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই চাকরি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় কার্ড বাতিল হবে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন এ নিয়মের আওতায় নিয়মিত হতে আবেদন করতে পারবেন শর্তপূরণকারী অবৈধ প্রবাসীরা।
নতুন ঘোষণায় বৈধ হওয়া প্রবাসীরা বৈধকরণের পর নতুন করে নিজ দেশ থেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের আনার সুযোগ পাবেন না। এমনকি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি ও নাগরিকত্ব আবেদনও করতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো প্রকার সামাজিক ভাতাও পাবেন না এ কোটায় বৈধ হওয়া অভিবাসীরা।
এর আগে কয়েক দফায় ১৯৯৭/১৯৯৮ সালে, ২০০১, ২০০৫ ও ২০০৭ সালে অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল গ্রিক সরকার। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে কমপক্ষে সাত বছর ধরে গ্রিসে অবস্থানরত প্রবাসীরা নানা শর্ত পূরণ করে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ আইনে বছরে ছয় থেকে আট হাজার অবৈধ প্রবাসী বৈধ হচ্ছেন বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
চলছে বাংলাদেশিদের জন্য নির্দিষ্ট চুক্তি
গ্রিস ও বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি চুক্তির আওতায় দেশটিতে ইতোমধ্যে বৈধতার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সমঝোতা চুক্তির আওতায় বৈধ হতে নিবন্ধিত হতে পারবেন বাংলাদেশিরা। এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুই দেশের মধ্যে হওয়া এই চুক্তির আওতায় সর্বশেষ ২ অক্টোবর পর্যন্ত এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধিত হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী। এদের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার বাংলাদেশি প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শেষে গ্রিস সরকারের থেকে বৈধতার সত্যায়ন পেয়ে রেসিডেন্স পারমিট বা স্মার্ট কার্ডের অপেক্ষায় আছেন।