৪ঠা অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংবেদনশীল হতে হবে

ড. আতিউর রহমান : মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অস্থির বিনিময় হারের কারণেই বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঘিরে বিশেষজ্ঞ ও প্রধান প্রধান অংশীজনের মধ্যে তর্ক—বিতর্ক চলছে। এসবের প্রভাব জনগণের মনেও পড়ছে। তাদের প্রতিদিনের জীবনচলায় চাপ ও তাপ দুই—ই বাড়ছে। তাই নীতিনির্ধারকদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে আরো সংবেদনশীল হতে হবে সে কথা তো সত্যি।

তবে এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। প্রবৃদ্ধির দৌড়ে এখনো বাংলাদেশ এগিয়েই আছে। তা ছাড়া সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়েও খুব বেশি দ্বিমত নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে সমকালীন সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে।

সামনে বিপুল নীল সমুদ্র। তাকে পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আগামী দিনের বাংলাদেশের নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিরাট যেসব ঢেউ এই মুহূর্তে তীরে এসে ধাক্কা মারছে তাতেই শঙ্কা বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশের অর্জন তো মোটেও হেলাফেলার নয়।

কিন্তু তবু কেন এই শঙ্কা এই দুর্ভাবনা কি খুবই সাময়িক নাকি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মতো কোনো বাস্তব কারণ রয়েছে আমাদের অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারের দিকে কী আমরা যথেষ্ট নজর দিইনি নাকি বিশ্ব অর্থনৈতিক চাপের মুখে আমরা খানিকটা অগোছালো পদক্ষেপ নিয়েছি বাজারের মুড বুঝে কি আমরা যথেষ্ট বিচক্ষণ নীতি—সক্রিয়তা দেখাতে দ্বিধান্বিত। এ কথা ঠিক, শুধু বাইরের অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করে আমরা আমাদের এগিয়ে চলার পথ কণ্টকমুক্ত রাখতে পারব না। আমাদেরও যে দায় আছে সে কথাটি মানতে হবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের লেখা ‘বাতায়নিকের পত্র’—এ ঠিকই অনুভব করেছিলেন যে ‘জাহাজের খোলের ভেতরটায় যখন জল বোঝাই হয়েছে তখনই জাহাজের বাইরেকার জলের মার সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। ভেতরকার জলটা তেমন দৃশ্যমান নয়, তার চালচলন তেমন প্রচণ্ড নয়, সে মারে ভারের দ্বারা, আঘাতের দ্বারা নয়, এই জন্য বাইরের ঢেউয়ের চড়—চাপড়ের ওপরেই দোষারোপ করে তৃপ্তি লাভ করা যেতে পারে; কিন্তু হয় মরতে হবে, নয় একদিন এই সুবুদ্ধি মাথায় আসবে যে আসল মরণ ঐ ভেতরকার জলের মধ্যে, ওটাকে যত শীঘ্রই পারা যায় সেচে ফেলতে হবে। মনে রাখা চাই যে সমুদ্র সেচে ফেলা সহজ নয়, তার চেয়ে সহজ, খোলের জল সেচে ফেলা। ’ নিঃসন্দেহে আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তির উৎস যদি কোনো ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে সেদিকে আগে নজর দিতে হবে।

আমাদের অর্থনীতিতে এখনো নিশ্চয়ই বাইরের বাধা প্রচুর রয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ডলার বাজারে আগুন। আমদানি করা পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব আমাদের মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনার পরিচিত কামান কি আসলেই আমরা সজোরে দাগিয়েছি সমন্বিত মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির তীর কি সময়মতো তূণ থেকে বের করেছি মুদ্রার একাধিক বিনিময় হারকে কি সমন্বিত করেছি শ্রীলঙ্কা এবং হালের তুরস্ক যদি নীতি সুদের হার এতটা বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর পথে হাঁটার সাহস দেখাতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারছি না এসব প্রশ্নের সোজা উত্তর দেওয়া মুশকিল। এর সঙ্গে অনেক কাঠামোগত প্রশ্ন নিশ্চয়ই জড়িয়ে আছে। এ কথাও মানি, নির্বাচনের এই বছরে অনেক ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তবু মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের মতো প্রধান সমস্যাগুলোর সামনাসামনি দাঁড়াতেই হবে আমাদের।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রার বাজারটিই আমাদের বেশি ভোগাচ্ছে। আবার এর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে মুদ্রানীতির ভঙ্গিটির সঙ্গে। অন্য কথায় সুদের হারের নমনীয়তার মাত্রার ওপর। কভিড সংকট ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে আমাদের আমদানি মূল্য বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই মূল্য শুধুই রপ্তানি ও প্রবাস আয় দিয়ে পুরোপুরি শোধ করা সম্ভব হয়নি বলেই বাণিজ্য ঘাটতির হাত ধরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার কমতে থাকে। তাই টাকার মান অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি করা পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। প্রায় একই হারে আমদানি শুল্কও বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার কিছুটা কমালেও সার্বিকভাবে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ন্তই রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানির ওপর নিশ্চয়ই এসবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমাদের আমদানি করা নিত্যব্যবহার্য পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও বিলাসপণ্যের সরবরাহ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তাই হালে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটাই কমেছে। এর প্রভাবে আমাদের চলতি হিসাবেরও উন্নতি হয়েছে। যদিও এই উন্নতির পেছনে অনেক ছোটখাটো আমদানি আনুষ্ঠানিক চলতি হিসাবের বাইরে চলে যাওয়ার কারণেও হতে পারে। কেননা ছায়াবাজারে লেনদেনের চাহিদা এখনো বেশ চাঙ্গা বলেই মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে হুন্ডির বাজার কম করে হলেও ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে আনুষ্ঠানিক প্রবাস আয় কমছে।

একই সঙ্গে নিট এফডিআই ও বিদেশি সহযোগিতার ছাড়সহ আমদানি ঋণ ও রপ্তানি বিল ডিসকাউন্টিং কমে যাওয়ার কারণে আমাদের আর্থিক লেনদেন ভারসাম্য নেতিবাচক হয়ে গেছে। এর প্রভাব সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যের ওপরও পড়েছে। এটিও এখন নেতিবাচক। এসবের চাপ রিজার্ভের ওপর পড়ছে। তা দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার এখনো মন্দ নয়। তবু অর্থনীতির বাড়ন্ত আকারের কথা মনে রাখলে এই ক্ষয়ের ধারা নিয়ে তো শঙ্কা হতেই পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের রপ্তানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের রপ্তানি আয় আগের চেয়ে কম নগদায়ন হচ্ছে, তা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে।

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের এতটা ফারাকই কি এর জন্য দায়ী এর ফলে কি এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছে যে ডলারের দাম আগামী দিনে আরো বাড়বে। তাই পুরোটা দেশে না আনলেই তাদের জন্য ভালো, নাকি বাকিতে পণ্য রপ্তানি আয় আগাম নগদায়নে বিদেশি ব্যাংক আগ্রহী হচ্ছে না টাকার অবচিতির ধারা হালের প্রবাস আয় কমে যাওয়ার পেছনেও খাটে নাকি প্রবাসীদের অনেকেরই আনুষ্ঠানিক কাজের যথাযথ কাগজপত্র নেই নাকি রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান অনেক সূক্ষ্মভাবে সব আমদানি এলসি দেখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না তাই তারা ছায়াবাজারে গিয়ে ডলারের চাহিদা বাড়াচ্ছে। তাহলে এই চাহিদা কমানোর উপায় কী মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতিকে আরো সংকোচনমূলক করাই কি এই সংকটের অন্যতম একটি উত্তর হতে পারে। এসব প্রশ্ন না এড়িয়ে বরং এসবের ভালো ও মন্দ দুই দিক নিয়েই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে আমার কাছে মনে হয়।

আমদানিনির্ভর শিল্পায়নের সুফল আমরা অনেক দিন ধরেই পেয়ে আসছি। কাঁচামাল, মধ্যপণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি না করা গেলে আমদানি বিকল্প কিংবা রপ্তানি শিল্পই বা সচল রাখা যাবে কী করে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পগুলোকে ওবিইউ বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে আমদানি মূল্য সেটলমেন্ট করার বিশেষ সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকই চালু করেছিল। কিন্তু কী কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর এ ধারায় স্বল্পকালীন আমদানি ঋণ দিতে অনীহা তা জানা দরকার। অবিলম্বে বিদেশি ব্যাংকগুলো ও তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে নিবিড় আলাপের প্রয়োজন রয়েছে।

আর বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি (এরই মধ্যে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে) চলতি হিসাবে বাণিজ্যিক লেনদেন, বিজ্ঞাপনী ব্যয়, চিকিৎসা ব্যয়, কার্ড পেমেন্টস কী করে সহজ ও ‘সিমলেস’ করা যায়, তা এক্ষুনি ভাবতে হবে। তাহলেই এসব লেনদেনের জন্য তারা ছায়াবাজারে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রপ্তানিকারকদের তাদের রপ্তানি পণ্যের আয় দেশে আনতে হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে (ব্যাংক, কাস্টমস, ইপিবি ইত্যাদি) তাদের রিপোর্ট করতে হয়। একই কথা সার্ভিস রপ্তানির বেলায় খাটে না। তাদের সে জন্য কর সুবিধা ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে এই আয়ও ছায়াবাজারে চলে যেতে পারে।

বিদেশি মুদ্রায় পরিবহন খরচের একটি বড় অংশ আমরা নিজেদের জাহাজ চালু করে বাঁচাতে পারতাম। এ বিষয়টির পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজন সমানতালে সক্রিয় হলে এ ক্ষেত্রে বড় মাপের বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় করা নিশ্চয়ই সম্ভব। বর্তমানের এই টানাপড়েনের মধ্যেই দিল্লিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ টাকা—রুপি কার্ড ও বিনিময়ের যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন দ্রুত করা হলে ডলার খরচের ওপর চাপ বেশ খানিকটা কমানো সম্ভব। এর পাশাপাশি যেসব দেশ থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয় তাদের সঙ্গে ‘সোয়াপ’ লাইন চালু করা যেতে পারে। একইভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে (যেমন—আইডিবির আইটিএফসি) জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বিশেষ সমর্থন লাইন চাওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থা এখনো চালু আছে, তবে সমকালীন বাস্তবতায় তা আরো জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।

এই আলোচনার আলোকে আমরা নিচের প্রস্তাবগুলো করতে পারি :
১. আমদানিসহ চলতি হিসাবের সাধারণ লেনদেন সিমলেস করা। ২. প্রবাস আয়কে আরো নীতি সমর্থন দেওয়া এবং তার লেনদেনে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে তা দূর করা। ৩. যেসব ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের দেওয়া স্বল্পকালীন ঋণে আমদানি মূল্য সময়মতো মেটায়নি তাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে ওই সব বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে সব বাধা দূর করার ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। বিনিময় হার ও আমদানি ঋণপত্র মনিটরিংয়ের চেয়ে আমাদের ব্যাংকগুলোর বিদেশি লেনদেন পরিশোধ ব্যবস্থার ধরন মনিটরিং আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৪. আমদানি পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের নামে ব্যাংকগুলোকে আতঙ্কিত না করে বরং গাইড করা এবং সাহায্য করা দরকার। যাদের সাধ্য কম তারা কম ইউপাস ব্যবস্থায় যুক্ত হবে—সে বার্তাটি দিতে হবে। ৫. সেবা খাতের আয়কে কর ছাড় ও অন্যান্য প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে আনার সুযোগ করে দেওয়া। ৬. সার্ক ফিন্যান্সের আওতায় ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত ডলার—রুপির ‘সোয়াপ’ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ৭. আইডিবির মতো বহুজাতীয় সংস্থার সঙ্গে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য অন্তত দুই বিলিয়ন ডলারের বিশেষ ঋণের লাইন খোলা। এ জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে। ৮. যেসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাপক, তাদের আমদানি ঋণসহ সব ধরনের বড় ঋণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটি করেছে। এই ব্যবস্থা সব দুর্বল ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য করা উচিত। ৯. প্রতিটি টাকা খরচের সঙ্গে খানিকটা বিদেশি মুদ্রার খরচও যুক্ত থাকে। তাই যেসব প্রকল্প শিগগিরই সমাপ্ত হতে যাচ্ছে সেগুলো বাদে আপাতত অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ স্থগিত কিংবা ধীরলয়ে করা উচিত। ১০. ব্যাংকগুলো আগাম আমদানি খরচের কথা বলে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে বলে বলা হচ্ছে। প্রশাসনিক দৃষ্টিতে না দেখে এই বিষয়টি চাহিদা ও সরবরাহের বাজারভিত্তিক ভারসাম্যহীনতার আলোকে দেখা এবং পরবর্তী সময়ে সহায়ক নীতি সমর্থন দেওয়া উচিত। ১১. সংকটকালে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের কোনোই বিকল্প নেই। যাঁরা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল, যাঁরা এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁদের এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিরন্তর আলাপ চালিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আমি মাত্র কয়েকটি পরামর্শ দিলাম। এমন সময়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, প্রতিনিধি, বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ উপযুক্ত অংশীজনদের সঙ্গে বসে নিবিড় আলাপ—আলোচনা করে চলমান আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটানোর পথ নিশ্চয়ই বের করা সম্ভব। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির ধারাবাহিকতার জোরে চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রয়েছে। এই সময়ে যে মেগা অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যেগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলশালী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কানেক্টিভিটিরও প্রশংসনীয় উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমাদের সামনে তৈরি হয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের অমিত সম্ভাবনা। কিন্তু তার আগে এই মুহূর্তে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা চাই। সম্পদ পাচার, সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণের দৌরাত্ম্যের মতো সমস্যাগুলো যে রয়েছে তা স্বীকার করতে হবে এবং সবাই মিলে আলাপ—আলোচনা করে এসব সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে ২০০৮ সালে মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার রিজার্ভকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল মুদ্রানীতি ও বাজেটের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে। সে সময়ে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনাও সম্ভব হয়েছিল। কী করে তা সম্ভব হয়েছিল সে নীতির ফুটপ্রিন্টগুলো তো রয়ে গেছে। তাহলে এখন তা পারব না কেন সে জন্য সব অংশীজনকে বিদ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
সৌজন্যে : বাংলানিউজ

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram