নিজস্ব প্রতিবেদক: স্মৃতিকাতর হয়ে কেউ কেউ আনন্দে কেঁদেছেন, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, ‘কেমন আছিস তুই, কতদিন দেখি না। তুই কি আমায় ভুলে গেছিস? মনে আছে, একসঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি, গল্প করেছি...।’
যশোর জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলনীর মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারীরা শনিবার সারা দিন ভেসে বেড়িয়েছেন স্মৃতির ভেলায়। স্কুলের ১৮৬ বছর উদযাপন ও প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলনীকে তাঁরা প্রাণের মেলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দিনভর স্মৃতির ভেলায় ভাসতে ভাসতে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন সবাই।
পুনর্মিলনীর প্রথম দিন শুক্রবার বিকেল থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর দ্বিতীয় দিন শনিবার জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইল্স্ সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুইদিনের মিলন মেলা শেষ হয়। ‘নবীন—প্রবীণ এক প্রাণ’ স্লোগান সামনে রেখে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। যশোর জিলা স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই জড়ো হতে থাকেন জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মিলনমেলায় পরিণত হয় জিলা স্কুলের মাঠটি। অনেকেই এসেছিলেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তাদের আগমনে উৎসবে মেতে উঠে পুরো মাঠ।
বিভিন্ন বুথ থেকে টি শার্টসহ রেজিস্ট্রশন সম্পন্ন করে নির্ধারিত বিভিন্ন উপহার গ্রহণ করেন সবাই। এরপর বিভিন্ন ব্যাচ ভাগ ভাগ হয়ে বাহারি সাজে বাঁশি, রঙিন বেলুন হাতে নিয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে গেয়ে ে¯¬াগানে শোভাযাত্রায় অংশ নেন নবীন—প্রবীন শিক্ষার্থীরা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বর্পূণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এরপর দারুণ শব্দে(উচ্চ সাউন্ডে) বাজতে থাকে ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটির সুরে নবীণ—প্রবীণরা নাচতে শুরু করেন। পরে জিলা স্কুলের থিম সং, সংগ্রামী গান, হিন্দী গানসহ সময়ের জনপ্রিয় সব গানে নাচতে দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের। কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন, কেউ স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে কেঁদে ফেলেন। এভাবে চলে সকাল, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। গল্প, আড্ডা, স্মৃতিচারণসহ ফেলে আসা দিনগুলো স্মরণ করেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে সরকারি—বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, অধ্যাপক, চিকিৎসক এককথায় সবাই ছিলেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ এসেছেন স্ত্রী—সন্তানদের নিয়ে। ছোটবেলার স্কুলের ক্লাসরুম আর বারান্দায় চোখ বুলিয়ে এ সময় অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। চলে আড্ডা, ছবি তোলা, গানের তালেতালে নাচ আর হইহুলে¬াড়।
মিলনমেলায় অংশ নিয়ে জিলা স্কুলে কাটানো স্মৃতিচারণ করে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন, ‘বহু বছর পর বিদ্যালয়ের পরিচিত মুখগুলো একসঙ্গে আজ। ছোটবেলার সেই রঙিন দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে। এই মিলনমেলা যেন আমাদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তি আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
স্মৃতিচারণ করে ১৯৬০ ব্যাচের গোলাম ফারুক বলেন, ‘ অনেক বয়স হয়ে গেছে। জানি না কতদিন আর বাঁচবো। এমন আয়োজন যেন আমাকে আরও বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা জোগাল।’
এস এসসি ’৯০ ব্যাচের নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে আসার পর থেকে স্মৃতির ভেলায় ভাসছি। বারবার মনে পড়ছে ছাত্রজীবনের নানান স্মৃতি।’
জিলা স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি এ জেড এম সালেক জানান, আমাদের মিলনমেলায় নেই কোনো দলাদলি। নেই কোনো বড়—ছোটর ভেদাভেদ। সবার পরিচয় একটাই। আমরা সবাই যশোর জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এমন একটি মিলনমেলায় এসে মনটা ভরে গেল।'
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়েব আলী বলেন, স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির পক্ষ থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ দেয়া হয়, বৃত্তি দেয়া হয়। এই পুনর্মিলনীতে অংশ নেয়ায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার কথা জানান।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারসহ অতিথিবৃন্দ ১৮৬ টি বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা, আড্ডা, প্রাক্তন শিক্ষক সংবর্ধনা ও বর্তমান শিক্ষক পরিচিতি, বৃত্তি প্রদান, পৃষ্ঠপোষক সম্মাননা, র্যাফেল ড্র, আতশবাজি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে সেনা কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত দুই হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র ও তাদের স্বজনেরা অংশ নেন। ১৮৩৮ সালে যশোর জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।