নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর প্রধান ডাকঘর থেকে ১৭ গ্রাহকের সঞ্চয় হিসাব ব্যবহার করে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার ও শনিবার তদন্ত টিমের অনুসন্ধানে এই আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হয়। এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় শনিবার আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
যশোর প্রধান ডাকঘরের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল গোলাম রহমান পাটওয়ারী বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। শুক্রবার রাতে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
যশোর বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মিরাজুল হক জানান, ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি আব্দুল বাকী পোস্টমাস্টার জেনারেল হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখিয়ে লেজার বই নিজের কাছে নিয়ে তাতে ১৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয় হিসাব থেকে পর্যায়ক্রমে এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা তুলে নেন। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি তিনি প্রথম একটি সঞ্চয় হিসাব থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাত করেন।
সর্বশেষ শহরের খড়কি এলাকার আবদুল হাইয়ের স্ত্রী নাসরিন পারভিনের সঞ্চয় বই থেকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ১৪ লাখ ৫শ’ টাকা তুলে নেন। অথচ ওই হিসাবে মাত্র আড়াই হাজার টাকা জমা ছিল গ্রাহকের। তবে লেজারে ও সঞ্চয় বইয়ে নিজে টাকা জমা দেখিয়েছেন তিনি। কাউন্টারে যে দিন বেশি ভিড় থাকত সেদিন তিনি এসব বই থেকে টাকা তুলতেন সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে। যেকারণে কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ পেতেন না।
গত ২ ফেব্রুয়ারি শহরতলীর উপশহর ই-ব্লক এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে এক সঞ্চয়ী হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন আবদুল বাকী। বিষয়টি ধরেন ডেপুটি পোস্টমাস্টার মেহেরুন্নেছা। তিনি জানান, সরকার ২০২০ সালের ১৮ মে এক আদেশে ডাকঘরে সঞ্চয় হিসাবে ১০ লাখ টাকার উপরে রাখা নিষেধ করে দেয়। কিন্তু সঞ্চয় হিসাব থেকে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে আমার সন্দেহ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ওই হিসাবে রয়েছে মাত্র একশ’ টাকা। বিষয়টি খুলনা জোন প্রধানকে অবহিত করা হলে তিনি টাকা উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল শামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম যশোর প্রধান ডাকঘরে তদন্তে আসেন। তদন্তের পর সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুল বাকীকে দু’দিন আগে খুলনা বিভাগীয় অফিসে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়। সেখানে শুক্রবার রাতে তাকে আটক করে পুলিশ। ওই রাতেই খুলনা থেকে যশোর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, মামলাটি দুদকে হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্ট মাস্টার জেনারেল সামসুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বাকীর কর্মকান্ড নিয়ে তদন্তের জন্য টিম গঠন করা হয়। তদন্ত টিমের সদস্যরা হলেন, খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (তদন্ত) খন্দকার মাহাবুব হোসেন, যশোর বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মিরাজুল হক, খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল (নিরাপত্তা) ফিরোজ আহমেদ, খুলনা সার্কেলের সুপারিনটেনডেন্ট (তদন্ত) বাবুল আখতার, খুলনা দক্ষিণ উপবিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক প্রণবেশ গাইন, যশোর ডাক বিভাগের শহর পরিদর্শক পবিত্র কুমার গাইন।
তদন্ত টিমের সদস্য ফিরোজ আহমেদ জানান, আমাদের তদন্ত এখনও অব্যাহত রয়েছে। আবদুল বাকী আর কোনো টাকা আত্মসাত করেছেন কিনা তা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর তদন্ত রিপোর্ট আমরা জমা দেব।
এব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোরের উপপরিচালক আল আমিন জানান, পোস্ট অফিস থেকে গ্রাহকদের নামে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জেনেছি। মামলাটি আমাদের কাছে পাঠানো হবে। তখন আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখব।