৮ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সন্দেহজনক লেনদেন
109 বার পঠিত

বিগত অর্থবছরে দেশের ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। উদ্বেগজনক এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২—২৩ অর্থবছরে তাদের কাছে প্রেরিত ঋণ সংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০টি, যা আগের ২০২১—২২ অর্থবছরে ছিল ৩৪১টি। এর মানে দাঁড়ায় এ ধরনের লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে দেড়গুণ।

গত অর্থবছরে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউতে সবমিলিয়ে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল ১৪ হাজার ১০৬টি। যা ২০২১—২২ অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৫৭টি। প্রতিষ্ঠানটি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি ব্যাংক খাতে ঋণ সংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যও প্রকাশ করেছে। উলে¬খ্য, বিএফআইইউ বিদেশে অর্থপাচার রোধে দেশের বিভিন্ন সংস্থা তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক ইউনিট হিসেবে কাজ করে।

তবে সন্দেহজনক লেনদেন তথা বিদেশে অর্থপাচারের সঙ্গে যে বা যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার তাদের নেই। ফলে বলা যায়, এটি একটি নখদন্তহীন বাঘ, যার মাধ্যমে সংস্থাটির অসহায়ত্বই ফুটে ওঠে। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরীর অভিমত হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে বা বেড়েছে, সেটি সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকেই প্রতীয়মান হয়।

বিএফআইইউ বলেছে, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সুদৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তদুপরি যাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ আছে তাদের সম্পর্কে তদন্ত করা বাঞ্ছনীয়। প্রকৃত দোষী ও দায়ীদের যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করাও জরুরি। অর্থপাচারের কারণে গত কয়েক বছরে দেশে ডলার সংকটও বেড়েছে— যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফও।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে, যার দুটি কিস্তি এর মধ্যে পাওয়া গেছে। ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে তারা বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শও দিয়েছে কতিপয় আর্থিক খাতে সংস্কারের জন্য।
আইএমএফ প্রশ্ন তুলেছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ডলার দেশে আসছে না কেন? আইএমএফ মূলত রপ্তানির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের প্রশ্ন তুলেছে, যা দেশের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উলে¬খ্য, আইএমএফের প্রশ্ন অহেতুক, অমূলক ও অযৌক্তিক নয়।

দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে বিদেশে। এটি এক রকম ওপেন সিক্রেট। তবে এর সঠিক পরিমাণ কত, তা জানে না কেউ। দুর্নীতি দমন কমিশন মাঝে মধ্যে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য—উপাত্ত ও প্রমাণের অভাবে তা থেকে যায় অগোচরে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানির মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তো আছেই।

এর বাইরে রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ী, সোনা ও মাদক চোরাচালান, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি। বিদেশে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতেই অর্থ পাচার করা হোক না কেন, সেদিকে নজরদারি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টি তো আছেই। বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হলে ডলার সংকটের নিরসনসহ সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে এমনটাই প্রত্যাশিত।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram