নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘন্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। শহরের এক জনপ্রতিনিধির বাসভবনে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অনুষ্ঠানে অতিথি না করায় ওই জনপ্রতিনিধি এ কাজ করেছেন বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
নির্যাতনে চোখ হাত পা ও অন্যান্য অংগে আঘাত পাওয়া যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন ফোনে অভিযোগ করেছেন, ‘বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ বাড়িতে ডেকে পাঠান। আমাকে তার বাড়ির দোতলায় নিয়ে একটি কক্ষে বসান। স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে তাকে অতিথি কেন করা হয়নি, এ বিষয়টি জানতে চান। আমি কমিটির কথা বলাতে ক্ষেপে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা শিক্ষা অফিসারকে ফোন করে অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়ে দেন।
পরে তার লোকজনদের ডেকে আমাকে রেখে ওই কক্ষে বসিয়ে রেখে তিনি পাশের কক্ষে চলে যান। তার লোকজন আমার চোখ, হাত, কান এবং স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা নির্যাতন চালিয়ে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। আমি সরাসরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসি। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভর্তি হইনি।’
তিনি আরো জানান, বর্তমান কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন টিপু। তার মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। তিনি তার মেয়াদে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ৪র্থ শ্রেণির দুটি পদে নিয়োগ দিতে চান। এতে বাধা দেন মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। এরপরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ক্ষিপ্ত চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষককে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন।
এ ঘটনার পর তিনি (উপজেলা চেয়ারম্যান) আগামী কমিটিতে আসার জন্য চেষ্টা করেন। তার অমতে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর তিনি নির্বাচন থামাতে বলেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান থাকায় তার নাম করে একদল সন্ত্রাসী উপশহর পার্কের সামনে প্রধান শিক্ষকের পথ রোধ করে নির্বাচন থামাতে বলে। এই ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন প্রধান শিক্ষক।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় তিনি বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। এছাড়া ওই বিদ্যালয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন টিপুও ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেন না।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছি। শিক্ষকতা জীবনে আমি কোন অন্যায় করিনি। নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আর এই বয়সে এসে আমি একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন নির্যাতনের শিকার হবো, তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বিচার চাওয়ার ভাষা নেই। হত্যার হুমকির নিয়ে দিন পার করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারো কাছে বিচার চাইতেও পারছি না। আমি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে ন্যায় বিচারের দাবি করছি।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবিব বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিনকে দেড় ঘন্টা ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্যাতন চালিয়েছেন। ঘটনাটি আমি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।