১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শেখ হাসিনার ভারত সফরে সহযোগিতার সম্পর্কে গতি পেয়েছে
93 বার পঠিত

দিলীপ কুমার আগরওয়াল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বহুল প্রত্যাশিত বৈঠক সফল ও ফলপ্রসূ বলে অভিহিত করা হয়েছে উভয় পক্ষ থেকে। দিল্লিতে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি শিল্পোন্নত দেশের জোট জি—২০ এর লিডার্স সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল এক অনন্য সম্মান।

এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক লপান। সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এ বৈঠক এবং সব বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার অভিপ্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এক বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত শুক্রবার ভারতীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিজেই অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদি। এর পর বৈঠক চলে ঘণ্টাব্যাপী।

প্রথমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর একান্তে কথা বলেন দুই নেতা। বৈঠক শেষে টুইটবার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত নয় বছরে ভারত—বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাকে জি—২০ লিডার্স সামিটে আমন্ত্রণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি—২০ এর মতো বৃহৎ পরিসরে গ্লোবাল সাউথের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতের মিত্রবাহিনীর সদস্যরাও রক্ত ঝরিয়েছেন; যা দুই দেশের রাখিবন্ধন সৃষ্টি করেছে। এ বন্ধন অমরতার দাবিদার।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আর সে কারণেই দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে সহযোগিতার সেই সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে।
বাংলাদেশের নিকটতম ও বৃহত্তম প্রতিবেশী ভারত। রয়েছে বৃহত্তম স্থল ও জল সীমান্ত। নিকট—অতীতে ছিটমহলসহ স্থল ও জল সীমান্তের অনেক বিরোধ আলাপ—আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্ধশতাধিক অভিন্ন নদী রয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুটি দেশ একই সঙ্গে সার্ক, বিমসটেক, আইওয়া এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার হয়ে থাকে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী জোটের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তুকে আশ্রয়দান ও স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত—বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ২৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ—ভারত মৈত্রী চুক্তি, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব—ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূত্রপাতের সঙ্গে তা বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটায়। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত—বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হয়। বন্ধুদেশ হিসেবে ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দেশ দুটির মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে।

বাংলাদেশে ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। মাঝে মধ্যে দুই দেশের সম্পর্কে স্থবিরতা বিরাজ করলেও উভয় দেশের সহযোগিতায় তা আবারও বেগবান হয়েছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, ভারত—বাংলাদেশ সম্পর্কের ঐতিহাসিক ভিত্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ যা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় চেতনাকে বেগবান করা। ফলে দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সম্পর্কের আস্থা সুসংহত করে বিদ্যমান বিরোধগুলোকে সহনশীল মাত্রায় নামিয়ে আনা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক চড়াই—উতরাই পেরিয়ে বেশকিছু অমীমাংসিত ইস্যুতে উভয় দেশ একমত হয়েছে। বাংলাদেশ—ভারত সম্পর্ক স্মরণকালের মধ্যে এখন উষ্ণতম। দীর্ঘদিন অমীমাংসিত থাকা প্রধান প্রধান দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুই দেশ সহযোগিতার নতুন এক কাল অতিক্রম করছে।

সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঢাকা—নয়াদিল্লি—ঢাকা মডেল স্থাপন করেছে। নতুন উচ্চতায় উন্নীত এই সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের জন্যই বড় আশাব্যঞ্জক।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram