১৮ই জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা হাবিবসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা : হাবিবসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই দশক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলার আসামিদের মধ্যে বাকি ৪৪ জনকে দেওয়া হয়েছে ৭ বছর করে কারাদণ্ড। সাতক্ষীরার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩৭ জনকে রায়ের সময় আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা একজনও আদালতে হাজির ছিলেন। ১০ আসামিকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলে। আর মামলার বিচার চলাকালে মৃত্যু হয় দু’জনের।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা লড়েন পিপি আব্দুল লতিফ, অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদসহ কয়েকজন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম; তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ও অ্যাডভোকেট শাহানারা পারভিন বকুল।
কার কেমন সাজা : মামলায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি অংশের প্রত্যেকটিতে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচ্চু, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রনজু ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রিপনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

যাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে, তারা হলেন-কলারোয়া উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আশরাফ হোসেন, উপজেলা মৎস্য দলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ তামিম আজাদ মেরিন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল রকিব মোল্যা, কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলাম, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মজিদ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, বিএনপি নেতা হাসান আলী।

উপজেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলী, বিএনপি নেতা ময়না, বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার, উপজেলা ছাত্রদালের সাবেক সভাপতি খালেদ মঞ্জুর রোমেল, বিএনপি নেতা তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, যুবদল নেতা মাজাহারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক, বিএনপি নেতা আব্দুর রব, উপজেলা কেরালকাতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, যুগীখালী ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা বিএপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামকেও ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একই সাজা হয়েছে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুল, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, যুবদল নেতা রিংকু, যুবদল নেতা আব্দুস সামাদ, বিএনপি নেতা আলাউদ্দীন, যুবদল নেতা আলতাফ হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিকুর রহমান সনজু, ছাত্রদলের সহ সভাপতি নাজমুল হোসেন, বিএনপি নেতা সাহাবুদ্দিন, বিএনপি নেতা সাহেব আলীর।
এছাড়া বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম, যুবদল নেতা টাইগার খোকন, যুবদল নেতা ট্রলি সহিদুল, বিএনপি নেতা কনক, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ কামরুল হোসেন, যুবদল নেতা মনিরুল ইসলাম, যুবদল নেতা ইয়াছিন আলী, পৌর বিএনপির সহ সভাপতি আখলাকুর রহমান শেলী, বিএনপি নেতা শাহিনুর রহমান, বিএনপি নেতা বিদার মোড়ল, যুবদল নেতা সোহাগ হোসেন, বিএনপি সমর্থক মাহাফুজার রহমান মোল্যা, জামায়াত কর্মী গফ্ফার গাজী, সাবেক উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি মাহাফুজুর রহমান সাবু সাত বছর করে কারাদণ্ড পেয়েছেন।

আসামিদের মধ্যে নাজমুল হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, আব্দুল কাদের বাচ্চু, রিপন, মফিজুল ইসলাম, খালেদ মঞ্জুর, রোমেল, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল মালেক ও রবিউল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
এছাড়া মাহাফুজুর রহমান সাবু ও লাকি বিচার চলাকালে কারাগারে মারা গেছেন।

কী ঘটেছিল : ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়।
শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন। ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

তখন সাতক্ষীরার আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশি¬ষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।
ওই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। তদন্ত করে পুলিশ বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনের পৃথক ধারায় দেওয়া তিনটি অভিযোগপত্রের মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হয় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।

তাতে তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেন সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবির।
আর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় গত বছরের ১৪ জুন অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। এর চারদিন পর ১৭ জুন বিচারক আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১২ এপ্রিল মামলা দুটি রায়ের পর্যায়ে আসে। টানা দশ মাসের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল আদালত।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram