সোমেল রানা, মেহেরপুর : শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা ও আগুনে পুড়ে মৃত্যু বেড়েছে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলায়। গত দেড় মাসে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে মারা গেছে ৬৫জন। ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন ও নিউমোনিয়াতে মারা গেছে ১৩জন। চিকিৎসকদের মতে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বেশি শীত পড়ে। এই শীতে উল্লেখিত রোগে আক্রান্ত অনেকে মারা যায়। সচেতনতার অভাবে মানুষ শীতে ভোগেন এবং অনেকে মারা যান। চিকিৎসাসেবার প্রাপ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মানুষের। রোগির চাপে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় রোগিদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। খোলা বারান্দায় রোগিরা চিকিৎসাসেবা নিতে শীতে কাবু হয়ে পড়ছে।
২৫০ শয্যার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গত ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫ জন মারা গেছে। এরমধ্যে শ্বাসতন্ত্রের কারণে মারা গেছে ডিসেম্বর মাসে ৬ জন ও চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭জন মিলে মোট ১৩ জন। গত পনেরদিনে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছে ৬জন। ১৪ জানুয়ারি গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আবু জায়েদ, ১১ জানুয়ারি সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মকিম উদ্দীন, যাদবপুর গ্রামের মাবিয়া খাতুন ও রামদাসপুর গ্রামের নুর ইসলাম, ২ জানুয়ারি পুরন্তরপুর গ্রামের তাহমিনা খাতুন ও গাংনীর ভাটপাড়া গ্রামের মো. হিরম্ন বিশ্বাস। এছাড়া শীত নিবারনে আগুন পোহাতে গিয়ে গাংনীর চেংগাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের মতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল কঠিন রোগ ব্যধি দেখা দেয়। এরমধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, সর্দি-কাশি, জ্বর, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি ও নিউমোনিয়া অন্যতম। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৩২ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়-ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়াতে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। জনবল সংকটে আউটসোর্সিং লোকবল দিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার সাথে শৈতপ্রবাহ কারণে ঠা-াজনিত রোগির স্থান সংকুলান হচ্ছেনা হাসপাতালগুলোতে । গত ২৪ ঘন্টায় মেহেরপুর সদরে ২৫০ বেডের মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭১জন রোগি ভর্তি হয়েছে শুধুমাত্র সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া রোগে আক্রাšত্ম হয়ে। যাদের অধিকাংশজনই শিশু। সরেজমিনে দেখা গেছে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত¥কভাবে ব্যহত হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি রোগির স্বজনরা জানালেন, হাসপাতাল থেকে খাবার স্যালাইন দেয়া হলেও বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। রোগিদের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবদুলস্নাহ আল মারম্নফ জানান, লোকবল সংকটে শতভাগ সেবা দেয়া যাচ্ছে না। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবায় ডাক্তারদের কোন অবহেলা নেই।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান- শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমনে হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে গত ৪৫দিনে ৬৫ জন মারা গেছে। এরমধ্যে ১২জন মারাগেছে শ্বাসতন্ত্রের কারণে। একজন অগ্নিদগ্ধ মিলে মোট ১৩ জন শীত জনিত কারনে মারা গেছে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন জওয়াহেরম্নল আনাম সিদ্দিকী বলেন- আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল কঠিন রোগ ব্যধি দেখা দেয়। এরমধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, সর্দি-কাশি, জ্বর, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি নিউমোনিয়া অন্যতম। অতিরিক্ত ঠা-া ও কুয়াশার কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত খাবার ও কলেরা স্যালাইন রয়েছে।