৯ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিশু আয়েশাকে হত্যার অভিযোগে কারাগারে সৎমা পারভীন

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বামীর আগের স্ত্রীর সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চাননি সৎমা পারভীন সুলতানা। এ কারণে দু’বছরের শিশু আয়শাকে প্রতিনিয়ত মারপিট করতেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ও দুই হাত বেঁধে দু’বছরের এই শিশুকে নির্যাতন চালাতেন পারভীন।

আয়শাকে মারপিট ও নির্যাতনের ছবিও নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে রেখেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ধারণ করা সেই ছবিতেই পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন পারভীন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানার এসআই জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় পারভীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

মঙ্গলবার বিকালে ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে পারভীনকে আদালতে প্রেরণ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে, সোমবার বিকেলে শহরের খড়কি ধোপাপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে পারভীনকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আট থেকে ১০ বছর আগে ওয়াসকুরনি পিন্টুর সাথে নিহত আয়েশার আপন মা জান্নাতুলের বিয়ে হয়। তাদের দু’টি সন্তান থাকা অবস্থায় পিন্টুর সাথে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় পারভীনের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিন্টুর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে জান্নাতুলের।

২০১৮ সালে পিন্টু পারভীনকে বিয়ে করেন। তখন থেকে তারা খোলাডাঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। গত পাঁচ মাস আগে পিন্টুর আগের স্ত্রী জান্নাতুল তাদের দু’ সন্তান আয়শা ও তার বড় ভাইকে বাবা পিন্টুর কাছে রেখে যান। তখন থেকে পারভীন সতীনের সন্তানদের উপর অত্যাচার শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে পিন্টু ও পারভীনের মধ্যে প্রায়ই গোলোযোগ হতো।

সর্বশেষ, গত ১৩ জানুয়ারি শনিবার সকালে বাড়ি থেকে পিন্টু বের হয়ে গেলে ছেলেকে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে দেন পারভীন। পরে শিশু আয়শাকে বেঁধে ঝাড়– দিয়ে মারপিট করেন। শিশুটির শরীর থেকে খামচি দিয়ে মাংস তুলে ফেলেন।

শিশু আয়েশার চুল ধরে পাশের একটি দেয়ালের সাথে ঘষা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত করেন। একপর্যায়ে শিশু আয়েশা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর তড়িঘড়ি করে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পারভীন। হাসপাতালের চিকিৎসক আয়েশাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তখন পারভীন মনগড়া কথা বলতে থাকেন। হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে নিজেই কান্নাকাটি করতে থাকেন তিনি। পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাবা পিন্টুর জিম্মায় দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পারভীনকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ আরও জানায়, ঘটনাটি নিয়ে পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে পারভীনের মোবাইল ফোনেই নির্যাতনের ছবি পায় পুলিশ। এছাড়া, আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে পারভীনকে আটক করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আয়শা কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। এছাড়া পারভীন সতীনের দুই সন্তানের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। তারই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবেই আয়েশাকে হত্যা করেছেন তার সৎমা পারভীন।

এঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। আটকের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বের হবে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আর কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেন্স) পলাশ বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তদন্তে শিশু আয়শাকে হত্যার বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। নিহত আয়শার পিতা গা—ঢাকা দেয়ায় পুলিশই শেষ পর্যন্ত বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। আটক পারভীনকে মঙ্গলবার আদালতের হাজির করা হলে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram