নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের গোবিলা গ্রামে যুবলীগ নেতা শিমুল হোসেন (৪০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পিবিআই প্রধান আসামি একই গ্রামের বুলবুল ও নাঈম হোসেনকে আটক করেছে। শুক্রবার সকালে পিবিআই ঢাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার রাতে গোবিলা গ্রামে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শিমুল হোসেন (৪০)। তিনি গোবিলা গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে। শিমুল চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমবটতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন।
শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন বাদ আছর জানাজা শেষে গোবিলা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মাদক সেবনে বাঁধা প্রদান ও পরকীয়া নিয়ে বিরোধে শিমুল খুন হতে পারে বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের আসল কারণ জানা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় জানিয়েছেন, গোবিলা গ্রামের জামির হোসেনের ছেলে বুলবুল হোসেন ও হযরত আলীর ছেলে নাঈম হোসেন এলাকায় মাদকের কারবারের সাথে জড়িত। এ ঘটনায় একই গ্রামের মকলেস বিশ্বাসের ছেলে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল এ বিষয়ে তাদের একাধিকবার নিষেধ করে। সর্বশেষ ঘটনার দিন বিকেলে নিহত শিমুল বুলবুল ও নাঈমকে স্থানীয় গোবিলা বাজারে প্রকাশ্যে নেশা না করার জন্য বকাবকি করে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর ধারণা, এ ঘটনায় বুলবুল ও নাঈম শিমুলকে রাতে একা পেয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে।
অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, নিহত শিমুলের সাথে বুলবুলের স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম ছিলো। যে ঘটনাটি বুলবুল জানতে পেরে শিমুলকে কয়েক দফা নিষেধ করে তার বউয়ের সাথে কথা বলতে। শিমুল বুলবুলের কথা অমান্য করে তার বউয়ের সাথে যোগাযোগ রেখে চলে। এই ঘটনাও ক্ষিপ্ত হয়ে বুলবুল নাঈমকে সাথে নিয়ে শিমুলকে খুন করতে পারে।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকালে শিমুল গোবিলা বাজারে বুলবুল ও নাঈমকে প্রকাশ্যে নেশার জন্য শাসানোর কারণে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। তারা দু’জন মিলে এক সাথে গাঁজা সেবন করে সন্ধ্যার পর শিমুলের গতিবিধি লক্ষ্য শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে তারা দু’জন গোবিলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তরিকুলের বাড়ির নিকট পৌঁছালে চড়াও হয় শিমুলের ওপর।
প্রথমে বাকবিতন্ডা ও পরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায় তারা। ওই সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শিমুল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাত নয়টা দিকে যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনলে জরুরি বিভাগের ডাক্তার সাকিব মো. আল হাসান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন বেগম জানিয়েছেন, এলাকার পরিচিত লোকজনই তাকে হত্যা করেছে। শুধু রাজনীতি করার কারণেই এই খুন। এলাকায় অনিয়ম অপরাধের বিরুদ্ধে সে সব সময় সোচ্চার থাকায় অপরাধীরা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তার স্বামীর। তিনি জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সেলিম হোসেন জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামি বুলবুল ও নাঈমকে আটক করা হয়েছে। তবে কি কারণে শিমুলকে খুন করা হয়েছে তা আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত থাকলে তারও আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, পূর্ব কোনো শত্রুতার কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে থাকতে পারে। নিহতের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে, শিমুল হত্যাকাণ্ডের পর এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই দুবৃর্ত্ত বুলবুল ও নাঈমকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে এই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, চুড়ামনকাটির যুবলীগ নেতা শিমুল হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই আসামি বুলবুল ও নাঈমকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।