সাইফুল ইসলাম : যশোরের ৭৩২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে মহাসমরোহে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে সামনে নিয়ে চলছে প্রতিমা তৈরি, মণ্ডপ সজ্জা, নতুন পোশাক কেনাসহ নানা প্রস্তুতি।
সার্বজনীন এ উৎসবকে আনন্দময়, শন্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করতে প্রশাসনেও চলছে প্রস্তুতি। বুধবার জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
শহরের কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে রঙের কাজ। কোন কোন মণ্ডপে রংঙের কাজও শেষ, চলছে প্রতিমা সজ্জা ও মণ্ডপের সৌন্দর্য বর্ধন কাজ। বরাবরের মত সব মণ্ডপে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার প্রস্তুতি চলছে।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়ের মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। ২০ অক্টোবর পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে চলবে ২৪ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে এবছর ঘটকে চরে দেবী দুর্গা মর্ত্য লোকে পদার্পণ করবেন। আবার ঘটকেই কৈলাশে ফিরবেন। পূজার ৫ দিনে দেবীর প্রতি ভক্তিপূর্ণ অর্ঘ নিবেদন করা হয়। ঢাক, ঢোল, শংখের ধ্বনিতে প্রতিটি মন্ডব মুখরিত হবে। ভক্ত, পূর্ণ্যার্থী ও দর্শনার্থী কৃপা লাভের আশায় দেবীর চরণে ভক্তিপূর্ণ অঞ্জলী নিবেদন করবেন।
মণ্ডবগুলোতে দেবী দুর্গার পাশাপাশি মহাভারত ও রামায়নের পৌরানিক কাহিনী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। পূজায় বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী টানতে মণ্ডপগুলোতে দেবী দুর্গার ভূবনমোহিনী রূপ উপস্থাপন করা হবে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ১৬৭টি, কেশবপুরে ৯৮টি, মনিরামপুরে ৯৯টি, চৌগাছায় ৪৯টি, ঝিকরগাছায় ৫৬টি, শার্শায় ৩২টি, বাঘারপাড়ায় ৯৭টি, অভয়নগরে উপজেলায় ১৩৪টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৭৩২ টি মন্ডবে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপঙ্কর দাস রতন বলেন, যশোরে যুগ—যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রয়েছে। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সে ধরনের প্রস্তুতি চলছে।
সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে ডিজে পার্টি ও অশ¬ীল কোনো অনুষ্ঠান না করতে পারে সে বিষয়ে ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদের নির্দেশনা প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পাঠানো হয়েছে। ১২ অক্টোবরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপের বিবরণ জানাতে বলা হয়েছে। অন্য বছরের মত এ বছরও জেলার সব পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা থাকবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি মন্দিরে থানা পুলিশের পাশাপাশি আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দল মাঠে থাকবে। পূজা যাতে সুন্দরভাবে হয় সেই জন্য প্রশাসনের সার্বক্ষণিক মনিটারিং থাকবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, পূজা সুন্দরভাবে করার জন্য শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি একটি সম্প্রীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড সদস্য, মণ্ডপ কমিটির সদস্যরা এ কমিটিতে থাকবে। শারদীয় দুর্গাপূজায় যারা ভালো করবে তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে বুধবার প্রস্তুতি সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তুষার কুমার পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুকছিমুল বারী অপু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, আনসার ভিডিপি প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধি, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।