নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ১০ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আল বদর ও রাজাকার বাহিনীর বর্বররা তাকে ঢাকার চামেলিবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশার প্রথম শিকার হন সিরাজুদ্দীন হোসেন।
শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক। ব্রিটিশ আমলের শেষভাগ থেকে শুরু করে তার সাংবাদিকতা জীবন স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত ব্যপ্ত। এই পুরো সময়কালে দেশের সকল আন্দোলনের সঙ্গে তার ছিল সরাসরি যোগাযোগ। তিনি তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে এ দেশের বঞ্চিত মানুষের কথা অসাধারণ দক্ষতায় সংবাদপত্রের পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ এই দেশে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে গেছেন। সে সময় তার লেখা ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়, অধুনা রাজনীতির কয়েকটি অধ্যায় ধরণের উপসম্পাদকীয় এবং এতদিনে শিরোনামে সম্পাদকীয় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তার দৃঢ় অবস্থানের সাক্ষ্য দেয়। তিনি প্রবাসী সরকারের কাছে পূর্ব পাকিস্তনের আমেরিকান কনসুলেটের গোপন রিপোর্টটি পাঠিয়েছিলেন, যা পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার প্রচারিত হওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
১৯৫২ সালে দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক থাকা অবস্থায় মহান ভাষা আন্দোলনের সপক্ষে তার সাংবাদিকতা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে তার অসাধারণ কীর্তি বলে পরিগণিত। শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন এ দেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জনক। ইত্তেফাকে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ফলে ১৯৬২ সালে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের কুখ্যাত ছেলেধরা দল ধরা পড়ে। মুক্তি পায় ৭২ শিশু। সিরাজুদ্দীন হোসেন ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট এ্যাওয়ার্ডে (আইপিআই) মনোনয়ন লাভ করেন।
আইপিআই বুলেটিনেও সিরাজুদ্দীন হোসেনের এই সাফল্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন তৎকালীন সানডে টাইমস ও পরবর্তীতে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক হ্যারল্ড ইভান্স।
শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের অসাধারণ হেডিং বাঙালী জাতির রক্তে আগুন ধরিয়ে দিত। চিনিল কেমনে, সুকুইজ্জা কডে, জয় বাংলার জয়, জনতার জয় হইয়াছে, বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন এবং দুই পাকিস্তানের ভারসাম্যহীনতাকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করে যে হেডিং করেছেন তা পাঠককের হৃদয়ের গভীরে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে যখন একটি নতুন রাষ্টে্রর জন্ম হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই পরাজয় নিশ্চিত জেনে ওই রাষ্ট্রকে মেধাশূন্য করতে তৎপর হয় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দালাল আলবদর বাহিনী। শুরু হয় বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ।