লাবুয়াল হক রিপন : চিনির ঘন সিরার সাথে কোডিন ফসফেট পাউডার, স্পিরিট ও কর্পুর মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে নেশাদ্রব্য ফেনসিডিল। রিসাইকেলিং করা বোতলে অথবা পলিথিনে ভরে সরবরাহ করা হচ্ছে এ ভেজাল ফেনসিডিল।
যশোর শহরেই ফেনসিডিল তৈরির তিনটি কারখানার সন্ধান পেয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
দীর্ঘদিন পর একটি কারখানা থেকে ১০১ বোতল ফেনডিলসহ কারিগর আলী রেজাকে আটক করতে সড়্গম হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খ-সার্কেলের উপ-পরিদর্শক সৈয়দ নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ষষ্ঠীতলা বুনোপাড়ার একটি বাড়ি (যেখানে ফেনসিডিল তৈরি হচ্ছিল) থেকে আলী রেজা তরফদারকে ১০১ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলার একটি পরিবার শহরে মাদকের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে। ওই পরিবারেই অšত্মত ডজনখানেক কারবারি রয়েছে। তাদের মধ্যে হাফিজুর রহমান মরা ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আরেক ভাই সাইফুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে রেখা বেগম, হাসিনা বেগম, রবিউল ইসলাম, তার স্ত্রী আকলিমা বেগম এবং মুরগি রহিম ফেনসিডিল তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। রবিউলের কারখানায় ২০২২ সালের মাঝামাঝি পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল মাসের দিকে ষষ্ঠীতলা বুনোপাড়ায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে সবুজ, আজাদ, নিখিল, নার্গিস, সৈয়দ, তুহিন, হাচিনা, আনু, শিউলি, জোৎন্সা, শহিদুল, হামু, সুফি, পলাশ ও নান্টুসহ দেড় ডজনের মত কারবারি আটক হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফেনসিডিল তৈরিকারক বলেছেন, খয়েরি রঙয়ের ওই পাউডারের মূল্য হেরোইনের চেয়েও বেশি। এক চা-চামচ পাউডার দিয়ে ১০ লিটার ফেনসিডিল তৈরি করা যায়। তবে এই পাউডারের সাথে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে রয়েছে চিনির ঘন সিরাপ, স্পিরিট ও কর্পুর। যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ড়্গতিকর বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ষষ্ঠীতলার রেললাইন পার হলেই যশোরের মাদকের হাট নামে খ্যাত চাঁচড়া রায়পাড়া। সেখানে রয়েছে অগনিত মাদকের কারবারি। তবে ওই এলাকায় মুরগি রহিমই হচ্ছেন ফেনসিডিল তৈরির একমাত্র কারিকর। কিন্তু কারবারিদের সংখ্যায় কোন কমতি নেই। মুরগি রহিম নিজে কারবারি হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক ডজন মামলার স্বাড়্গী। ফলে নিজে কারবার করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান তিনি।
ওই এলাকার আরেক শীর্ষ কারবারি হোসেন মরা নিজেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। একই পরিবারে তার মা এবং স্ত্রীও একই কারবারে দিন কাটাচ্ছেন। তবে মরা প্রকাশেই কারবার করেন। তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করা ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে থাকেন বলে অন্য কারবারিদের কাছে প্রকাশ করেন। তবে ওই এলাকার ছোট ও বড় জয়নাল রয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর সোর্স পরিচায়দানকারী।
ইসরাইল ড্রাইভারের ছেলে সজলও বিভিন্ন বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে অন্য কারবারীদের কাছ থেকে মাদকের চালান ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সজলের বিরম্নদ্ধে পঙ্গু হাসপাতালে ঝিনাইদহের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান হত্যারও অভিযোগ রয়েছে।
উলেস্নখ্য ওই এলাকার বাবু নামে এক নব্য নেতার সাথে গলায় গলায় চলাফেরা ছিল আলী রেজার। যে কারণে রেজাকে সাথে নিয়ে বড় চালানে অস্ত্র ও মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিলেন বাবু। সপ্তাহখানেক আগে রেজার একটি মাদকের চালান আত¥সাৎ করেন বাবু। এই নিয়ে তাদের দুইজনের সম্পর্কে ফাঁটল ধরে। ফলে ষষ্ঠীতলার রবিউলের মাধ্যমে রেজার তৈরি করা মাদকের একটি চালান আটক করিয়ে দেয়া হয় বলে ওই এলাকার একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে আলী রেজা, রবিউল, হাসিনা, মুরগি রহিমই ফেনসিডিল তৈরিকারক।
এদিকে নকল ফেনসিডিল তৈরি ও বিক্রিতে বাধা দিতে পারে এমন বিষয়টি সন্দেহ করে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষকে ওই কারবারিরাই বিভিন্ন বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেয়। ওই সময় স্থানীয় একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে গা-ঢাকা দেয় তৈরিকারক ও কারবারিরা। আর পুলিশ এবং সাংবাদিকদের তথ্য দিয়েছে এমন বিষয়টি সন্দেহ করে ফেনসিডিল তৈরিকারক রবিউল ইসলাম রেলগেট পশ্চিমপাড়ার চঞ্চলকে ছুরিকাঘাত করে। এরপর থেকে রবিউল এলাকা থেকে পালিয়ে চলে যায়। কয়েকমাস পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি নিয়ে আবারো এলাকায় ফেনসিডিল তৈরি ও কারবার করছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এই ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যশোরের ক-সার্কেল জুয়েল ইমরান বলেছেন, মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধীদের সনাক্ত ও আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ চিহ্নিত মাদক কারবারি সেলিমকে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, ফেনসিডিল এবং ইয়াবা নকল বা আসলের বিষয়টি জব্দের পর রাসায়নিক পরীড়্গার জন্য সেটা পাঠানো হয়। সেখান যে রিপোর্ট আসবে সেটাই কার্যকারী হবে।