তহীদ মনি : গেল বছর ২১ ডিসেম্বর বিকেলে যশোর শহরের খড়কী বামন পাড়া এলাকায় ছুরিকাহতে খুন হয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এরফান গাজী। এ খুনের ঘটনায় আটক সকলেই কিশোর গ্যাং এর সদস্য। সামান্যপ্রাপ্তির লোভে তারা এ খুন করে। এ ধরনের চাকুবাজির ঘটনা শহরে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। চাকু হাতে কিশোররা তুচ্ছ কারণেই হয়ে উঠছে বেপরোয়া। প্রশাসন বলছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করছে।
প্রশাসন যখন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে তখন বিভিন্ন মোড়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ক্ষুদে চাকুধারীরা। তারা এতই বেপরোয়া যে শহরের মানুুষ এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে শহরে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- কোচিংয়ে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন।
চাকুবাজরা এতটা সাহসহ দেখাচ্ছে যে প্রকাশ্য দিবালোকে এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতেও চাকু চালাতে দ্বিধা করছে না। বাড়িতে ঢুকেও ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের গাড়িখানা সড়কের পুরাতন কসবা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে ছুরি-চাকুধারী কয়েকজন দুর্বৃত্ত ৩জনকে ছুরিকাঘাতে জখম করে। ওইদিন রাত ৮টার দিকে শহরের খালধার রোডের আখপট্টি থেকে যশোর পুলিশের হাতে বার্মিজ চাকুসহ নূরনবী, আল আমিন, তাসকিন বর্ষণ নামে কিশোর গ্যাংয়ের ৩ সদস্য আটক হয়। তবে পুরাতনকসবা পুলিশ ফাঁড়ির সামনের হামলাকারীরা তারা নয় সেটা পুলিশের আটক বিবরণীতে স্পষ্ট।
পরদিন শুক্রবার বিকেলে যশোর পৌরপার্কে শাফায়েত নামের এক যুবক দুবৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পার্কে দুই অজ্ঞাত যুবক পেছন থেকে তাদের ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। পরে পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
শনিবারে যশোরের জেস গার্ডেন পার্কে স্ত্রীকে ইভ টিজিং করার প্রতিবাদ করেন স্বামী আমানুল্লাহ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইভটিজিংকারী কিশোর গ্যাং আমানুল্লাহকে ছুরিকাঘাতে জখম করে। পাশ্ববর্তী লোকেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগেও পার্ক ও আশেপাশে ছুরি-চাকুধারী গ্যাং অনেককে ইভটিজিং করেছে, ছুরি মারার ঘটনাও ঘটেছে। তাদের ভয়ে অথবা অন্যকোনো কারণে পার্ক কর্তৃপক্ষ নীরব থাকে। অনেকের অভিযোগ, এই গ্যাংয়ের পিছনে বড়ভাইদের আশীর্বাদ রয়েছে।
শনিবার শহরের লিচুবাগানে আরও একটি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। কিশোর গ্যাংয়ের নেতা মুসকান নামে এক কিশোরী। আগেও তার নামে এ জাতীয় ঘটনা ঘটানোর ও বাহিনী নিয়ে চলাচলের খবর পত্রিকার পাতায় লেখা হয়েছে। শনিবার ওই গ্যাং অধুনালুপ্ত দৈনিক পূরবী সম্পাদকের বাড়িতে ঢুকে প্রকাশ্যে সাংবাদিক পুত্র মাহবুব সোহেলকে ছুরিকাঘাতে আহত করে ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মাত্র ৩ দিনে যশোর শহরের এ ঘটনা মানুষের মনে শুধু আতঙ্ক বাড়িয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, তাদের ছেলেরা এমএম কলেজে পড়ে। তারা শহরের কোনো কোনো কোচিংয়েও যায়।
মোল্লাপাড়া, নীলগঞ্জ, নিউমার্কেট, শেখহাটি থেকে এই চলাচলে তারা আতঙ্কিত, কখন কী হয় এই ভয়ে! তারা জানান, পুলিশের সামনেও অপরাধীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটচ্ছে ! এটা কী ভয়ের বিষয় নয় ? এজন্য শত শত মানুষের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও মানুষ সাহস করে আক্রান্তকে উদ্ধারে যেতে পারছে না। তারা এ ব্যাপারে পুলিশী কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন।
একজন অভিভাবক জানান, বর্তমান পুলিশ সুপার যশোরে যোগদান করে চাকু-ছুরির বিরুদ্ধে অভিযান করে বেশ কিছু উদ্ধার করেছিলেন। সে সময় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
অবশ্য শহরে এত হামলা ও কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার বাড়লেও পুলিশের দাবি আইন শৃঙ্খলা এখন বেশ ভালো। গতকাল রোববার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় পুলিশের প্রতিনিধি এডিশনাল এসপি(অপরাধ) সাইফুল ইসলাম এ দাবি করেন।
এদিকে অব্যাহত ছুরির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরক্তি পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানান, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সজাগ আছে। পুলিশের বিভিন্ন টিম মাঠে কাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।