নিজস্ব প্রতিবেদক : ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক শতবর্ষী জেলা পরিষদ ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধাšত্ম প্রত্যাহারের দাবিতে যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটি। সোমবার সকালে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের কাছে নেতৃবৃন্দ এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে নেতৃবৃন্দ বলেন, যশোরের ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনে তারা রাজপথে নামবেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক কার্যকর পদড়্গপে গ্রহণের আশ্বাস দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, যশোর জেলা পরিষদ ভবনটি যুক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন। স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ১৯১৩ সালে এই ভবনটি নির্মিত হয়। ভবনটি এখন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক।
২০১৯ সালে ভবনটি একবার ভাঙ্গার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় যশোরবাসীর আন্দোলনের মুখে সিদ্ধাšত্মটি প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ঘাপটি মেরে থাকা একটি পক্ষ ব্যবসায়িক স্বার্থে সুকৌশলে পাঁচ বছর পরে এসে ফের ভবনটি ভাঙ্গার সিদ্ধাšত্ম নিয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা যশোরবাসী এই সিদ্ধাšেত্মর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি এটি ইতিহাস-ঐতিহ্য বিরোধী সর্বনাশী সিদ্ধাšত্ম। তবে জেলা পরিষদ ভবনটি সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে মূল নকসা অপরিবর্তিত রেখে সংষ্কার করে ভব্যিষৎ প্রজন্মকে যশোরের ইতিহাস জানার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
আমরা লক্ষ করছি যে ‘একে একে নিভিছে দেওটি’ এর মতো যশোরের ঐতিহ্যের ধারক সব স্মারকগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার প্রথম ভবন যশোর জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পরিত্যক্ত ভবন। এই ভবনটি যশোরের প্রথম কালেক্টরেট ভবন। এই ভবনটির ঐতিহ্য রক্ষায় কারো কোনো উদ্যোগ নেই। সেটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রাšেত্ম। শুধু তাই নয় যশোরের জেলা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ও ইতিহাস ঐত্যিহের স্মারক। এগুলোও আমরা সংরক্ষণের দাবি করি। যে জাতির ইতিহাস নেই সে জাতি নিঃস্ব। যশোর জেলাবাসী সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্যের অধিকারী। কিন্তু এসব ঐতিহ্যের স্মারকগুলো রক্ষার দায়িত্বে যারা তাদের অজ্ঞতা, অদূরদর্শীতা ও স্বার্থপ্রীতির কারণে একে একে ধংস্ব হয়ে যাচ্ছে। আমরা ভব্যিষত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে, যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে ঐতিহাসিক এই ভবনগুলো সংস্কার করে সংরক্ষণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রম্নকুনউদ্দৌলাহ, যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মাস্টার নূর জালাল, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, জাসদ’র কেন্দ্রীয় কার্যকরি সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন, সদস্য সচিব শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, প্রেস ক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু, বিপস্নবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জিলস্নুর রহমান ভিটু, যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু, উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপস্নব প্রমুখ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রম্নকুনউদ্দৌলাহ বলেন, জেলা পরিষদ ভবনটি সত্যিই যদি সংস্কারের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে মূল নকশা অপরিবর্তিত রেখে সংস্কার করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যশোরের ইতিহাস জানার সুযোগ দেয়া উচিত।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবারউল হাছান মজুমদার বলেন, দাবির বিষয়টি গুরম্নত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা হলো যশোর। যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর ১৯১৩ সালে নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হয়। শতবর্ষী সেই ভবনটি এখনো অবিকৃত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এটি এখন কালের সাক্ষী, গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক।