শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের মিষ্টি পানির জন্য সংরক্ষিত একমাত্র পুকুরটিতে দোকান ঘর নির্মানের জন্য ইজারা দিয়েছে বাগেরহাট জেলা পরিষদ। মঙ্গলবার (২০ জুন) এ সংক্রান্ত একটি পত্রের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আসলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী জানান, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন শরণখোলার রায়েন্দা পুকুরের দক্ষিণ পাশে আধা-পাকা ঘর নির্মানের জন্য সাত জনের নামে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া পত্রের একটি অনুলিপি (স্মারক নং-৪৬.৪২.০১০০.০০১.৩২.১০০.২২.২৯৮(৭) গতকাল তার দপ্তরে এসেছে পৌছে। ওই পত্রে উলে¬খিত ইজারা বন্দোবস্ত নেয়া সাত ব্যক্তি হচ্ছেন, শিরিন সুলতানা রুমি, আসাদুজ্জামান খান, উজ্জল সাহা, অম্বরিশ রায়, মৌসুফা নুর মুমু, ইমরান উদ্দিন শুভ, শিশির কুমার সাহা। ইউএনও জানান, পুকুরটি স্থাণীয় জনসাধারনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, শতবর্ষী এ পুকুরটি রায়েন্দা বাজারের হাজার হাজার মানুষের মিষ্টি পানির চাহিদা পুরোন করে আসছে। সংরক্ষিত এ পুকুরটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষও বন্ধ রয়েছে। জেলা পরিষদ কিভাবে পুকুরে পাকা ঘর নির্মানের জন্য ইজারা বন্দোবস্ত দেয় তা বোধগম্য নয়। এখানে ঘর নির্মাণ করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যাবে।
রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু হালদার, রায়েন্দা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান, শরণখোলা আইডিয়াল ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ উসমান গনি বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থী ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকে। পুকুরের উপর মার্কেট বা ঘর নির্মান হলে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। অনতিবিলম্বে ওই ইজারা বাতিলের দাবি জানান তারা।
রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুকুরটি সাধারন মানুষের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। অথচ সংষ্কার না করে জেলা পরিষদ না বুঝে ঘর নির্মানের ইজারা দিয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, জেলা পরিষদের ওই পুকুরটি স্থানীয় জনসাধারনের জন্য গুরুত্বপুর্ণ হওয়ায় উত্তর পাশে সাত লাখ টাকা ব্যয় সম্প্রতি একটি পিএসএফ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দপ্তর থেকে পুকুরটি খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের মার্কেট থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওয়াদুদ আকন, স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম সাগর, জিয়াউল হাসান রোকন, মিরাজ আকন জানান, জেলা পরিষদ শতবর্ষী এ পুকুরটির পূর্ব পাশে ইতোমধ্যে মার্কেট নির্মান করে সংকুচিত করে ফেলেছে। দক্ষিণ পাশে আবার মার্কেট নির্মাণ করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব হারাবে। ঐতিহ্যবাহি রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুল ও রায়েন্দা মডেল সরকারি বিদ্যালয়টি আড়ালে পড়ে যাবে।
বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যপারে খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান টুকু বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত আপত্তি দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনে ইজারা বাতিল করা হবে।