নিয়তের পরিশুদ্ধতা ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। আল¬াহতায়ালা শুধুমাত্র সেইসব ইবাদত কবুল করেন, যা একমাত্র তার উদ্দেশে করা হয়। পরিশুদ্ধ অল্প ইবাদত উত্তম, লৌকিকতাপূর্ণ অধিক ইবাদত থেকে। নবীজি সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম বলেছেন, ‘তোমার দীনকে (নিয়ত) খাঁটি করো, অল্প ইবাদত নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ শোয়াবুল ইমান : ৬৮৯৯
লৌকিকতামুক্ত অল্প ইবাদত পরকালে মুক্তির কারণ হতে পারে। পক্ষান্তরে লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদত অনেক হলেও তাতে ব্যক্তির মুক্তি মিলবে না। আসুন, কোরআন—হাদিসের আলোকে ইবাদত—বন্দেগিতে লৌকিকতার ক্ষতি সম্পর্কে জেনে নেই।
নিয়তের পরিশুদ্ধতা : ইবাদত—বন্দেগির একমাত্র যোগ্য অধিকারী সৃষ্টিকর্তা মহান আল¬াহ। আর যাবতীয় ইবাদত—বন্দেগি করতে হবে খাঁটি মনে। যেমনটা আল¬াহতায়ালা বলেছেন, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল¬াহর ইবাদত করবে।’ সুরা বাইয়্যিনা : ৫
আখেরাতে প্রতিদানযোগ্য আমল সেটা, যা আল¬াহর নিয়তে আখেরাতের জন্য করা হয়। যে ইবাদত দুনিয়া বা কাউকে দেখানোর উদ্দেশে করা হয়, সে ইবাদত আল¬াহ কবুল করেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেই এবং পরকালে তার কোনো অংশ থাকবে না।’ সুরা শুরা : ২০
লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদতের পরিণাম জাহান্নাম : ইবাদতের মূল উদ্দেশ আল¬াহর সান্নিধ্য অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি। লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদত বান্দাকে জান্নাতে নেওয়ার পরিবর্তে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। তাই ইবাদতে লৌকিকতা পরিহার অবশ্যক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতে সর্বপ্রথম একজন শহীদকে বিচারের জন্য উত্তোলন করা হবে। আল¬াহ বলবেন, দুনিয়াতে কোনো ইবাদত করেছ? লোকটি বলবে, আপনার রাস্তায় যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছি।
আল¬াহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং লোকে তোমাকে বীর বলবে, সে জন্য যুদ্ধ করেছ। সেটা বলা হয়েছে। তখন উপুরাবস্থায় টেনে—হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর, একজন আলেমকে আনা হবে। তাকেও ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সে বলবে, আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইলম এবং কোরআন শিখেছি এবং মানুষকে শিখিয়েছি। আল¬াহ বলবেন, মিথ্যা বলছ। বরং লোকে তোমাকে আলেম ও কারি বলবে সে জন্য শিখেছিলে।
আর সেটা হয়েছে। তাকেও উপুরাবস্থায় টেনে—হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতপর, একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিকে আনা হবে। তাকে ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে বলবে, আপনি আমাকে যে সম্পদ দিয়েছিলেন, আপনার এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে আমি সেই সম্পদ ব্যয় করিনি। আল¬াহ বলবেন, মানুষ তোমাকে দানবীর বলবে সে জন্য এগুলো করেছিলে। তাকেও উপুরাবস্থায় টেনে—হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। শোয়াবুল ইমান : ৬৮০৫
দাজ্জালের ফেতনা থেকেও ভয়াবহ : ইবাদতে লৌকিকতার বিপদকে নবী কারিম (সা.) দাজ্জালি ফেতনার থেকে ভয়াবহ ফেতনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। একদিন নবীজি (সা.) সাহাবিদের কাছে এমন সময় এলেন, যখন তারা চুপিসারে কথা বলছিল। নবীজি (সা.) বললেন, এই গোপন বৈঠক কীসের? তারা বলল, ইয়া রাসুলাল¬াহ! আমরা দাজ্জালি ফেতনা সম্পর্কে কথাবার্তা বলতেছিলাম। তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমি কী তোমাদের দাজ্জালের থেকেও ভয়াবহ ফেতনা সম্পর্কে জানাব? তা হলো, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির স্থান পাওয়ার জন্য ইবাদত করা। নাওয়াদেরুল উসুল : ১৫২ . অর্থাৎ লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা।
জাহান্নাম প্রতিদিন চারশ বার আশ্রয় চায় : এটা সুনিশ্চিত বিষয় যে, যারা লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদত করবে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। শাহর ইবনে হাওসাব (রহ.) বলেন, কিয়ামতের দিন দুনিয়া এবং তৎসংশি¬ষ্ট সবকিছু আল¬াহর দরবারে উপস্থিত করা হলে, তিনি বলবেন, এখান থেকে যেগুলো আল¬াহর জন্য। যারা আল¬াহর জন্য ইবাদত করেছে, তাদের পৃথক করো। অন্য সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। শোয়াবুল ইমান : ৬৮৪৮
ইমরান আল কাসির বলেন, জাহান্নামের এমন একটি উপত্যাকা আছে, যার থেকে অন্যান্য জাহান্নাম প্রতিদিন চারশ বার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর তা প্রস্তুত করা হয়েছে, ইবাদতে লৌকিকতা প্রদর্শনকারীদের জন্য। শোয়াবুল ইমান : ৬৮৫০
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমরা ‘জুব্বুল হুজন’ থেকে আল¬াহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তাকে বলা হলো, সেখানে কারা থাকবে? নবীজি বললেন, ইবাদতে লৌকিকতা প্রদর্শনকারীরা। শোয়াবুল ইমান : ৬৮৫১