১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রেলের টিকিট প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা
রেলের টিকিট : প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা

তহীদ মনি : পকেটে পর্যাপ্ত টাকা নিয়ে রেল স্টেশনে গেলেই এখন আর মিলবে না টিকিট। যাত্রীদের মোবাইল নাম্বার ও জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারের মাধ্যমে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে প্রথমে রেজিস্টেশন করতে হবে । তারপর টিকিট কাটতে দিতে হবে নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বার ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। এ অবস্থায় প্রযুক্তিজ্ঞানহীন যাত্রীরা কিছুটা বিপাকে পড়লেও আস্তে আস্তে সবাই এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আর যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তারা প্রযুক্তিনির্ভর এ ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। যশোর স্টেশন কর্তৃপক্ষও বলছেন, নতুন এ পদ্ধতি চালুর প্রথম দুদিন যাত্রী কিছুটা কমেছিল। তবে এখন তা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।


গত ১ মার্চ থেকে ট্রেনে ভ্রমণ ও টিকিটের জন্যে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। এ নিয়মে ট্রেন ভ্রমণের জন্যে এনআইডি দিয়ে পূর্বে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট কাটতে হবে। আন্তঃনগর ট্রেনে চড়তে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মেসেজ করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ। যাদের এনআইডি নেই তারা জন্ম সনদ ব্যবহার করেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন । তবে অবশ্যই নিজ মোবাইল নম্বর থাকতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন করতে খরচ হবে আড়াই টাকা। এরপর রেজিস্ট্রেশন নম্বরধারী যাত্রী কাউন্টারে গিয়ে অথবা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন। একজন রেজিস্ট্রেশনধারী প্রতিবার ভ্রমণের জন্যে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কাটতে পারবেন। তবে ভ্রমণকারী ওই ৪ জনের মধ্যে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশনধারীকে থাকতে হবে। অন্যথায় সবাই বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং ডাবল ভাড়ার জরিমানা গুণবেন।


নতুন এ নিয়ম নিয়ে কিছু ভোগান্তি কিছু বিভ্রান্তি থাকলেও রেলওয়ে কর্তৃপড়্গ বলছেন, পরীক্ষামূলক এ ব্যবস্থা দ্রম্নত মানিয়ে নিয়েছেন যাত্রীরা। যশোর স্টেশন মাস্টার মো. আয়নাল হাসান জানান, দুই একটা ব্যতিক্রম ঘটনা ছাড়া ট্রেন ভ্রমণের ড়্গেেত্র নতুন নিয়মের কোন বিকল্প নেই।


সম্প্রতি ভারত ভ্রমণকারী বাংলাদেশী নাগরিক সালেহীন যশোর রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে জানান, বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম, ২৫ টাকা দিয়ে টিকিট কিনলাম এবং কোলকাতা চলে গেলাম। কোথাও কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এখানে মোবাইল নম্বর দিয়ে আড়াই টাকা খরচ করে আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে, এরপর টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করতে হচ্ছে। টিকিট কাটার জন্য, সাথে রাকতে হচ্ছে এনআইডির কপি এবং রেজিস্ট্রেশনে যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও সচল রাখতে হচ্ছে। তার মতে, ‘এটি একটি আজগুবি বিষয়।’


চুয়াডাঙ্গায় যাওয়ার জন্যে ট্রেনের অপেড়্গায় সোমবার দুপুরে রেল স্টেশনে ছিলেন বৃদ্ধ আলাল ফকির। তিনি বলেন, ‘কাছে মোবাইল আছে কিন্তু এনআইডি নেই, এখন রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে না তাই ইন্টারসিটির টিকিট কিনতে পারিনি, আগের ট্রেন চলে গেছে এখন লোকাল ট্রেনের অপেড়্গায় আছি।’


নাম প্রকাশ না করে একজন সরকারি কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি না হয় রেজিস্ট্রেশন করলাম, টিকিট নিলাম কিন্তু দেশের সবারই কি মোবাইল আছে? এনআইডি কি সব সময় কাছে থাকে? অনেকের এনআইডিতো ত্রুটিযুক্ত। তারা ট্রেনে চড়তে পারবে না এটাতো হতে পারে না।’


তবে যাত্রীদের অনেকেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক কথাও বলেন। তাদের মতে, নতুন কোন পদ্ধতি চালু করলে কিছু সমস্যা দেখা যায়। তারপর মানুষ যখন অভ্য¯ত্ম হয়ে যায় তখন দেখাযায় নতুন পদ্ধতিই ভাল এবং যুগউপযোগী।
এ ব্যাপারে যশোর রেল বিভাগ বলছে, বিদেশী অথবা অথবা যাদের এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন নেই বা যাদের মোবাইল নম্বর নেই তাদের ক্ষেত্রে ইন্টারসিটি ট্রেনে চড়ার কোনো বৈধ সুযোগ আপাতত নেই। লোকাল বা মেইল ট্রেনের জন্যে এখনো স্টেশনে হাজির হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনা যাবে। যশোর রেল স্টেশন থেকে বর্তমানে বেতনা, বেনাপোল, রকেট ও নকশীকাঁথা নামের ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল হিসেবে চলছে।


সরেজমিন দেখা যায়, রেল কর্মচারীরা যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করছেন, তবে খুব আন্তরিকভাবে নয়। একজন যাত্রী গতকাল স্টেশনে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্যে সহায়তা চাইলে স্টেশন মাস্টার সাদেকুর রহমান বুকিং সহকারীকে সহযোগিতার জন্য বলেন। বুকিং সহকারী বিরক্তির সাথে চেষ্টা করেন, ব্যর্থ হয়ে চলে যান। ওই যাত্রী পরবর্তীতে অন্যের সহায়তা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন।


এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টার মো. আয়নাল হাসান জানান, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা, ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই নীতি বা¯ত্মবায়নের জন্যে এ নিয়ম চালু করেছে সরকার। এতে রেল বিভাগ লোকসানের হাত থেকেও রড়্গা পাবে। কারণ ইচ্ছে করলেও বিনা টিকিটে যেমন ভ্রমণ করা যাবে না তেমনি টিটির কাছ থেকে সামান্য টাকায় স্বল্প দূরত্বের টিকিট কিনে ভ্রমণ করাও যাবে না। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, এতে পরবর্তীতে সবাই টিকিট কাটতে অভ্যস্ত হবেন।
বর্তমান পদ্ধতির সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দুই দিন টিকিট বিক্রি অনেক কমে গিয়েছিল এবং যশোর স্টেশনের আয়ও কম হয়েছিল, তবে এখন ধীরে ধীরে যাত্রী যাতায়াত স্বাভাবিক হচ্ছে। মানুষ রেজিস্ট্রেশনে অভ্যস্থ হচ্ছে, যারা পারছেন না তাদেরকে রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করছে রেল বিভাগ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram