রূপদিয়া (যশোর) প্রতিনিধি : প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে রূপদিয়া বাজারে শ্রম বিক্রির জপন্য খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা আসেন। এখানেই শ্রমিকদের নেওয়ার জপন্য আসেন স্থানীয় জমি ওয়ালা ও কৃষকরা। দরদাম ঠিক করে তাদের সঙ্গে আনা ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, নসিমনে নিয়ে যান শ্রমিকদের।তবে এবার হাটে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেশি বলে অভিযোগ অনেক জমিওয়ালা ও কৃষক ক্রেতাদের।
রূপদিয়া বাজারের পূর্ব পাশে শ্রমিক বেঁচা-কেনার হাট বসে প্রতি সোম ও শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটের দিন। তবে ধান কাটার মৌসুমে প্রতিদিনই শ্রম বিক্রির জন্যে লোক আসে। কৃষকরাও শ্রমিক সংগ্রহ করে।
শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই রূপদিয়ার শ্রমিক হাট ধানকাটার শ্রমিক ও জমির মালিকদের ভিড়ে গমগম করছে। তবে এবার শ্রমিকের চেয়েও শ্রমিক কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি।
বাঘারপাড়া থেকে আসা একজন কৃষক জানান, ৪৮ শতকের ১ বিঘা ধান কেটে, বেঁধে দিতে ১১ হাজার টাকা চাচ্ছেন শ্রমিকেরা। এরকম পরিস্থিতিতে ধান ও বিচালি বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করলে লাভ তেমন থাকে না। খুলনা জেলার পাইকগাছা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিক হায়দার মোল্লা বলেন, জিনিসপত্রের যা দাম তাতে হাজার বারোশো টাকা জনের দাম না হলে চলে না। বাজারে ৭ থেকে ৮ শ টাকা জনের দাম চলছে। বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের কৃষক সাদিক বিশ্বাস এবার ৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। ভালো ফলনও হয়েছে। কিন্তু চড়া মূল্যে শ্রমিক সংগ্রহ করে ধান ঘরে তুলতে হবে তার। এবারও যদি ভারী বৃষ্টিপাত হয় তাহলে বেশিরভাগ ধান পানিতে নষ্ট হবে। যে কারণে তিনি বেশিদামে শ্রমিক নিয়ে তড়িঘড়ি করে ধান কেটে ঘরে তুলতে চান।
একই ধরণের কথা বলেন, ঝিকরগাছার মাটিকুমড়া গ্রামের আসাদুল গাজী। তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে ধান করেছেন। তার চাষের জমিতে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া গেলেও অনেক টাকা মজুরি চায়। যে কারণে এ দিন শ্রমিক নিতে পারবেন কিনা দ্বিধায় রয়েছেন।সাতক্ষীরা থেকে একসঙ্গে এসেছেন প্রায় ৩০ জন শ্রমিক। তাদের সকলেরই কথা এক। তারা হাজার টাকার কমে কেউ বিক্রি হবেন না। এছাড়াও তাদের জন্য রাখতে হবে থাকা ও খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা।
হাটে কেউ কেউ চুক্তিতে কাজ নিচ্ছেন। মোতালেব হোসেন নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কেশবপুর মূলগ্রাম থেকে তিনজন এসেছি। ১২ কাঠা জমির ধান বওয়ার কাজ দুই হাজার টাকায় নিছি। অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি থেকে আসা কাদের মুন্সী বলেন, ‘দুদিন আগে হাজার টাকায় জন কিনে ধান কাটাইছি। আজ বান্ধার জন্যে লোক কিনতে এসেছি।
কয়েকজন কৃষক জানান, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে,ঝড় হচ্ছে। বৃষ্টি বা ঝড় বাড়তে পারে। ফলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।তাই দাম বেশি হলেও অনেকে বাধ্য হয়ে শ্রমিক নিচ্ছেন, আর জিনিসপত্রের দাম বেশির অজুহাতে শ্রমিকরাও উচ্চ মূল্য হাঁকিয়ে বসে আছেন।