সমাজের কথা ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়াটা চালু রাখবে। তাদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যেগুলো আসবে সেগুলো গ্রহণ করবো। সেই ব্যাপারে পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান।
‘আন্তর্জাতিক কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পার্সনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ সনদে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সই করেছেন জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা মানবাধিকার কর্মীদের জন্য মাইলফলক। প্রায় সাতশয়ের উপর মানুষ গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন। যার জন্য মায়ের ডাকসহ বিভিন্ন সংস্থা করছেন। আমরা অনেকেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। আর যেন কেউ কখনও নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনও বাহিনীকে দিয়ে, কোনও পদ্ধতির মাধ্যমে, সরকার বিরোধিতা করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কাজ করা হচ্ছে, এসব বলে গুম করতে না পারে। তার জন্য এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছি। সরকার এ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করবেন। মানবাধিকার নিয়ে শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুম বাংলাদেশে অহরহ ঘটেছিল, যেটা এ যাবতকালে অস্বীকার করা হয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যারা গুমের শিকার হয়েছেন তারা একটা সুরক্ষা পাবেন। সরকারি পর্যায় থেকে ফ্যাসিবাদ কায়েম রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধমতকে দমন করার জন্য গুম করে ফেলা। সেটাতেও একটা শক্ত বার্তা গেলো যে, এসব আর হবে না। গুম তো করার কথা না। সেটা করতেছেন (হাসিনা সরকার) বলে আমাকে অবস্থান নিতে হয়েছে। সরকারি বাহিনীর জন্য গুম করার লাইসেন্স নেই। তার আইনগত এখতিয়ার নেই। এটা বন্ধ থাকা উচিত ছিল।
যেসব বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা— এমন প্রশ্নে এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরের কাগজ জমা পড়ার পর থেকে কার্যকর হবে। আগের গুমের ঘটনা নিয়ে একটা কমিশন হয়েছে। সেখানে কার্যপরিধি বলে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কোথাও বাদ দেওয়া হয়নি। কত মানুষ গুম হয়েছে এ তালিকা সরকার প্রকাশ করবে কিনা এমন প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কমিশনের কার্যপরিধি অনুযায়ী একটা তালিকা চূড়ান্তভাবে করতে হবে।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ দলকে সরকার সংবর্ধনা দেবে বলে জানান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ বিজয়ের জন্য ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খেলোয়াড়দের মধ্যে যে উদ্যম তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখবার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো দরকার। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান পানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বন্যার কারণে রফতানিমুখী যেসব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের যেন শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, সেই জন্য সরকারের পক্ষে সহায়তার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থক্ষেত্রে সংস্কারের অংশ হিসেবে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কালো টাকা সাদা করার যে বিধি ও রীতি সেটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখান থেকে সরকার যে টাকা আনতে পারে, সেটা দিয়ে সরকারের যে খুব আগায় তা না। তবে, মূল্যবোধটা বেশি অবক্ষয় হয়। ফলে এটার বিরুদ্ধে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কবে থেকে বন্ধ হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। আগে যেমন একটা আদেশের মাধ্যমে বলে দেওয়া হতো কালোটাকা সাদা করা যাচ্ছে। এখন আর সেরকম বলা হবে না, উল্টো বলা হতে পারে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিতে যা যা করণীয় সরকার তা শুরু করে দিয়েছে। হজ বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য বড় ব্যাপার। হজের ক্ষেত্রে আমরা সিন্ডিকেট দেখতে পাই। যাতে প্যাকেজের মূল্য অনেকটাই বাড়িয়ে তুলে। হজের যে খরচ সেটা যৌক্তিকভাবে কমানো যায়। সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।
হজের সম্ভাব্য খরচ কত হতে পারে এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খরচ কত কমাবে এটা নিয়ে কথা হয়নি। তবে, প্যাকেজটা যে বাড়তি এবং এটা কমানো সম্ভব যা প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে। কমানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগে আমাদের একটি পদ্ধতি ছিল জিও-এনজিও সমন্বয়। সেটা পুনরুজ্জীবিত (রিভাইভ) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা দায়িত্বগ্রহণের সময় থেকে একমাসের মধ্যে কোন কোন মন্ত্রণালয়, সরকার কি কি কাজ করেছে সেগুলোর ব্যাপারে একটা নোট করে আপনাদের (সাংবাদিক) দিয়ে দেবো।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সুবিধাভোগী অনেক কর্মকর্তা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে এই সরকারের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে— এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টা হচ্ছে কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে তার ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থান জানাচ্ছি। যে কোনও সরকারকে তার কাজ চালাতে গেলে ভালো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দরকার পড়ে। যদি আমরা দেখি কারও দক্ষতা আছে, তার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের তো কাজটা নিয়ে এগোতে হবে। এখন যদি আগের সময়ের কেউ ভালো পদে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা যদি কাউকেই নেবো— এমন নীতিগত সিদ্ধান্তে চলে যায়, তাহলে কাজ এগোবে কেমন করে? সেটা বড় প্রশ্ন। কারও ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা জানাবে। এ রেজিম, সেই রেজিম, আগের রেজিম, পরের রেজিম বললে আমাদের সঙ্গে অন্যদের তফাৎটা কী? একটা তাফাৎ তো আমাদের আনতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।
বৈষম্যমূলক নীতি বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় প্রণীত বিশেষ বিধান রহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়ে সৈয়দা রেজওয়ান হাসান বলেন, আমাদের এই সরকারটা হচ্ছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আউটকাম। সেখানে নিরাপত্তা সংস্থা এরকম বিশেষ নিরাপত্তার দরকার আছে বলে মনে করে না।