মনিরুজ্জামান : যশোরে রমজানকে ঘিরে সবজির বাজারে চড়াভাব বিরাজ করছে। তবে কৃষকের ঘরে সে সুফল পৌঁছাচ্ছে খুব কমই। এই অঞ্চলের কৃষকের ৪০ টাকা কেজি’র বেগুন পাইকারি বাজার হয়ে স্থানীয় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। ৪০-৪৫ টাকার পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
একইভাবে পাইকারি ১০-১২ টাকার টমেটো খুচরায় ২৫-৩০ টাকা, ৪০-৪৫ টাকার শশা ৮০ টাকা এবং ৪৫-৫০ টাকার কাঁচামরিচ ৮০-১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দু’দিনের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে বাজার ঊর্ধ্বমুখি হওয়ায় ক্রেতারা প্রয়োজনের বেশি সবজি কিনছেন না। যশোরে কৃষকের ক্ষেত থেকে পাইকারি, খুচরা বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
কৃষি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রমজান মাসকে ঘিরে বরাবরই বাজারে চড়াভাব বিরাজ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বাজারে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হলেও কৃষকের ঘরে এর সুফল খুব কমই পৌঁছায়। কিন্তু মধ্যসত্ত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণহীন বাণিজ্যের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির মূল্য যেন আকাশ ছুঁয়েছে। এতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, যশোরের আট উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে কৃষকেরা বেগুন, পটল, শিম, টমেটো, লাউ, মুলা, বাধাকপি, ঢেড়শ, বরবটি, সবুজশাকসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করে থাকেন। জেলার কৃষকরা মৌসুমে সাধারণত দু’বার সবজির আবাদ করে থাকেন।
যশোরের সবজিজোনখ্যাত সাতমাইল বারীনগর, খাজুরা বাজার এবং এবং শহরের বড় বাজার ও রেলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক ক্ষেত থেকে তুলে পাইকারি বাজারে বেগুন ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আড়ত থেকে সেই বেগুন ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ক্রেতা সেই বেগুন কিনছেন ৭০/৮০ টাকায়। একইভাবে কৃষকের ৪০ টাকার পটল পাইকাররা বিকোচ্ছেন ৪৫/৫০ টাকায় এবং খুচরা ক্রেতা কিনছেন ৬০/৬৫ টাকায়। আকার ভেদে কৃষক প্রতিটি লাউ ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। আড়ত থেকে তা ২৫/৩৫ টাকায় কিনে খুচরা বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। কৃষকের ৪৫-৫০ টাকার ঢেড়শ খুচরা বাজারে ৮০-১০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কৃষকের ৪৫-৫০ টাকার কাঁচামরিচ ৮০-১২০ টাকা কেজি, ১০-১২ টাকা কেজি টমেটো খুচরা বাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকা, ৪০-৪৫ টাকার শশা ৮০ টাক কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০-২৫ টাকা হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে বাজার ঊর্ধ্বমুখি হওয়ায় চাহিদা তুলনামূলক কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
যশোর সদর উপজেলা বীর নারায়নপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানালেন, বাজারে দাম ভাল হলেও চাহিদা কম। রমজান উপলক্ষে বাজারে সবজির বাড়তি চাহিদা নেই। দাম একটু বেশি হলেও কৃষকের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না।
শহরের রেলবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা নূর ইসলাম জানালেন, রমজান উপলক্ষে বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। তবে প্রতিবছর রমজানের আগে যেভাবে বেচাবিক্রি হতো, এবার তেমনটা নেই। ভিড়ও যেমন কম; সবাই কিনছেনও কম কম।
শহরের চাঁচড়া এলাকার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ওয়াসিম হোসেন জানালেন, বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে বেশি কেনার সুযোগ নেই। সাধ্যের মধ্যে অল্প অল্প করে কিনেই সংসার চালাতে হচ্ছে।