এস হাসমী সাজু : দুই বছরের ব্যবধানে প্রতিটন রডে দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ৬৪ হাজার টাকা টনের রড রোববার থেকে ৯৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রডের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নির্মাণ শিল্পে।
রডের সাথে পালস্না দিয়ে বাড়ছে লোহার সিট, অ্যাঙ্গেল ও এমএস’র দাম। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যও বাড়তির দিকে। বিপাকে পড়েছেন ঠিকাদাররা। মধ্যবিত্তের জন্য বাড়ি নির্মাণ এখন অলীক কল্পনা।
যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে চান নাছির উদ্দিন। তিনি তিলতিল করে জামানো টাকা দিয়ে জমি কেনেন। কিন্তু বাড়ি নির্মাণের জন্য সকল প্রস্তুতি নিলেও রডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে কাজে হাত দিতে পারছেন না।
বাড়ি নির্মাণ এখন তার সাধ্যের বাইরে। নাছির উদ্দিনের মত স্বল্প সম্পদের মালিকদের কাছে এখন বাড়ি নির্মাণ অকল্পনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন গ্যাসের দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কোম্পানি গুলো দামি বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে আর আগে কথনো ৯৪ হাজার টন দামে রড বিক্রি হয়নি।
রড ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন জানান, নির্মাণশিল্পের অন্যতম অপরিহার্য উপকরণ রডের দাম ফের বেড়েছে। মাঝে কিছুদিন টন প্রতি দুই-তিন হাজার টাকা কম ছিল। চলতি সপ্তাহ ধরে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে রডের দাম। এক টন ভালো মানের রড বিক্রি হচ্ছে ৯৪ হাজার টাকা।
তবে বেশি বেড়েছে সাধারণ মানের রডের দাম। এই মানের রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩-৮৪ হাজার টাকায়। একই সঙ্গে বেড়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল, গ্রিল, রেলিংয়ের দামও।
শহরের লোহাপট্টি এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করছেন সাইদুর রহমান বাবু। তিনি জানান, বাড়ির কাজে হার দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রডের দাম বেড়েছে তিন জাচার টাকা। রডের সাথে অন্যান্য সামগ্রী এমনকি মজুরিও বেড়েছে। এখন হয় বাজেট বাড়াতে হবে নতুবা কাজ বন্ধ করতে হবে।
একই কথা জানান উপশহর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম নতুন বছর সব কিছুর দাম স্বাভাবিক হবে। কিন্তু এখন আরও দাম বাড়ছে। লোন ছাড়া বাড়ির স্বপ্ন আমাদের আর হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতারা বলছেন, আগে করোনার কারণে পণ্য আমদানিতে অসুবিধা ছিল, সে সময় দাম বেড়েছিল। বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরম্নর পর দাম বাড়লো। এখন এলসির অজুহাতে আবারও দাম বাড়ানো হলো। উৎপাদন পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরায়ও দাম বেড়েছে।
যশোর লোহা ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের কোষাধ্যড়্গ চৌধুরী স্টিল কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী ইউনুছ চৌধুরী রিহ্যাবের বলেন, দুই বছরের ব্যবধানে রডের (প্রতি টন) দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০২০ সালে এক টন রোড ছিল ৬৪ হাজার টাকা, ২০২১ সালে ৬ হাজার টাকা বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হয়েছিল।
২০২২ সালে কয়েক ধাপে ২৪ হাজার টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার টাকায় ঠেকেছে। রডের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে দাম বেড়ে যায় সিমেন্ট, বালি, পাথর, ইট, থাই অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিল ও রেলিং, জেনারেল ইলেকট্রিফিকেশন, স্যানিটেশন, টাইলস ও লেবার খরচ।
এতে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে ৫৪১ টাকা ৩৮ পয়সা বেড়েছে। দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে এর মধ্যে শুধু রডের দাম বাড়ার কারণে ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটে নির্মাণ খরচ বেড়েছে ১২০ টাকা।
যশোর নড়াইল রোডর ইমান আলী এন্ড সন্স, চৌধুরী স্টিল কর্পোরেশন, মেসার্স রাজ্জাক ষ্টীল হাউজ, ঘোপ কবরস্থান এলাকার প্রিন্স সিমেন্ট ঘর, বাহাদুরপুর বাশতলা এলাকার সততা এন্টার প্রাইজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, এক টন বিএসআরএম রড বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে সাড়ে ৯৪ হাজার টাকায়, সপ্তাহ আগে সেটা ৯২ থেকে ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়ে কেএসআরএমের রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার থেকে ৯৩ হাজার ৫শ টাকা, একেএস ৯২ থেকে ৯৩ হাজার, আরআরএম ৮৬ হাজার থেকে ৮৬ হাজার ৫শ টাকা, বন্দর স্টিল ৮৭ হাজার থেকে ৮৭ হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাধারণ রডের।
বিভিন্ন সাধারণ মানের রড তিন সপ্তাহ আগে যেটা টনপ্রতি ৭৮ থেকে ৭৯ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেটা তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে ৮৩ থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সততা এন্টার প্রাইজের মালিক ও ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, আগে করোনার কারণে রডের কাঁচামাল জাহাজে করে আনতে পারছিলেন না উৎপাদকরা। এতে দাম বাড়িয়েছিলেন তারা। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতে আরেক দফা দাম বেড়েছিল।
এখন আবার এলসি খোলার সমস্যার কারণে কাঁচামাল আনতে পারছেন না। এতে দাম বাড়ানো হয়েছে, আমরা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতা। দাম বাড়ানো হলে দাম বাড়ে, দাম কমলে কম দামেই বিক্রি করি। দাম বাড়ায় রডের বিক্রিও কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
যশোরের নড়াইল রোড এলাকার মেসার্স রাজ্জাক ষ্টীল হাউজের মালিক নূর হোসেন বলেন, নতুন ভাবে রডের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে নির্মাণ উপকরণের দাম কমাতে হবে, ড্যাপ নিয়েও ভাবতে হবে।
এটা না হলে উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বি হবে বাড়িভাড়া। আবাসন খাতে শঙ্কা তৈরি হবে।