নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে যুবলীগ নেতা আফজাল হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদšত্ম সূত্রগুলো বলছে, এক জনপ্রতিনিধি আফজালকে খুন করতে তার একাধিক সহযোগীকে ব্যবহার করেন। হামলাকারী হিসেবে ট্যারা সুজনের নাম এজহারে থাকলেও বাদ পড়েছে ‘খুনের রেকিকারী’ সাগর ওরফে হাগা সাগর। খুনের পরপরই হাগা সাগরকে পুলিশ আটক করলেও জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি এখন ওই জনপ্রতিনিধির কাছের মানুষ হিসেবে চলাফেরা করছেন। মামলার তদšত্ম কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আফজাল খুনের পরিকল্পনাকারীসহ এর সাথে জড়িতদের পুলিশ চিহ্নিত করতে পেয়েছে। অচিরেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ২৯ মে রাতে শহরের নাজির শংকরপুর চাতালের মোড় সিটি মডেল স্কুলের সামনে একদল সন্ত্রাসী কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে একই এলাকার সলেমান শেখের ছেলে যুবলীগ কর্মী আফজাল হোসেনকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাজির শংকরপুর মাঠপাড়ায় আব্দুল মাজেদের ছেলে সাগর ওরফে হাগা সাগরের সাথে আফজাল হোসেনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। যে কারণে সাগরের জন্য তাকে বাসা ভাড়া নিয়ে দেন আফজাল হোসেন। তারা দুইজন বন্ধুরমতই চলতেন। ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, নাজির শংকরপুর মুন্সি হ্যাচারি এলাকায় গামা-খোকনদের এক একর আট শতকের একটি জি কেনেন যশোরের এক ব্যবসায়ী। ওই জমিটি কেনা বেচায় মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন আফজাল হোসেন। কিন্তু আফজালের মধ্যস্থতার বিষয়টি ছিনিয়ে নেন এক জনপ্রতিনিধি। এজন্য তিনি জমি বেচা কেনার মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি (দালাল) হিসেবে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। ওই টাকার লোভ সামলাতে পারছিলেন না আফজাল হোসেনও। এ নিয়ে ওই জনপ্রতিনিধির সাথে আফজালের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ঈদ খরচের নামে জনপ্রতিনিধির কাছে ৫০ হাজার টাকাও দাবি করেছিলেন আফজাল। এরই মধ্যে ওই জমিতে মাটি ভরাটের কাজ বাগিয়ে নেন এলাকার আরেকজন। ফলে দালালীর এত টাকা হাতছাড়া হওয়ায় আফজাল হোসেন চরমভাবে ড়্গেেপ যান।
একদিকে দালালীর মোটা অংকের টাকা অন্যদিকে ওই জমিতে মাটি ভরাটের কাজ দুটোই হাত ছাড়া হওয়ায় মাটি ভরাটের কাজে বাধা দেন আফজাল। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন ঐ জনপ্রতিনিধি। কিন্তু আফজাল টাকা ছাড়া কোন সমঝতায় রাজি হন নি। ২৯ মে সন্ধ্যার পরে জিরো পয়েন্ট মোড়ে ঐ জনপ্রতিনিধি তার অফিসে আফজালকে দেখা করে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। আফজাল সন্ধ্যার পরে জনপ্রতিনিধির অফিসে চলে যান টাকা পাওয়ার আসায়। কিন্তু তাকে টাকা দেয়া হয়নি। টাকা না পেয়ে তিনি ফিরে আসছিলেন। গোটা বিষয়টি নজরে রাখছিলেন সাগর ওরফে হাগা সাগর। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ট্যারা সুজন আফজালের উপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আফজাল খুনের কিছুড়্গণ পরই হাগা সাগরকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ আটক করে পরদিন আদালতে সোপর্দ করে। কিন্তু কি কারণে হাগা সাগরকে আটক করানো হলো আজও অজানা রয়েছে এলাবাসীর কাছে।
এদিকে খুনের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আফজালেল ঘনিষ্ট বন্ধু সাকিব। ৩০ মে বেজপাড়া তালতলা কবরস্থানে আফজালের দাফনের পর কবরস্থান থেকে উঠে এসেই সাকিব জিরো পয়েন্ট মোড়ে যশোর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুলকে কুড়াল দিয়ে হত্যা চেষ্টা করে পালিয়ে যায়। কিন্তু কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল হত্যা চেষ্টা মামলায় আফজালের নিকটজনদের নির্যাতন করা হয়। আফজাল হোসেনের ভাই উজ্জল হোসেন, রমজান আলী ও নজরুল হত্যাকাণ্ডে ইসলামকে আটকও করে পুলিশ।
আফজাল হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান কোতোয়ালি থানার এসআই শরীফ আল মামুন। একে একে কয়েকজনকে আটক করেন এসআই মামুন। এরমধ্যে পলাশ ও সাজ্জাদ নামে দুইজনে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন। আর সেই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে আরো কয়েকজনকে আটক করা হয়।
উচ্চ আদালত থেকে ট্যারা সুজনসহ চারজন অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পায়। বাদীর আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি তদন্তের জন্য যশোর সিআইডি পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। এরপর ট্যারা সুজনসহ ওই চারজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা আদালত থেকে চারজনের মধ্যে ট্যারা সুজনসহ দুইজনকে রিমান্ডে নেন। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে জবানবন্দি দেয় ট্যারা সুজনসহ দুইজন। এর আগে তদন্তে উঠে আসা সাকিব ও শুকুর আলী নামে আরো দুই আসামি এখনো পলাতক রয়েছে।
তাছাড়া আফজালকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহার করা ইজিবাইক এবং ছুরি আজও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া তদন্তে উঠে আসা আরো দুই খুনিকেও পুলিশ আটক করতে পারেনি। তবে তাদের আটকে জোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। #