নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে যুদ্ধদিনের দুঃসাহসিকতার শিহরণ জাগানিয়া গল্প শোনালেন তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জিলা স্কুলের অডিটোরিয়ামে ‘এসো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে এই গল্প শোনান বৃহত্তর যশোরের মুজিববাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এ এইচ এম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চা বৃদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা তথ্য অফিস। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘দৃঢ় আর্দশ ও চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এখন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে এবং এই চেতনা ধারণ করতে হবে।’
জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে একাত্তরের রণাঙ্গনের যুদ্ধস্মৃতি তুলে ধরে একেএক গল্প শোনান তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা বলেন, আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম বলেই আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। যেখানে তোমরা স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পারছো। নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই বাংলাদেশ ও স্বাধীনতাযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের জন্য বাঙালিরা যুদ্ধ করেছিল বলেই আজ স্বাধীন দেশ পেয়েছি।
তিন মুক্তিযোদ্ধাই মুক্তিযুদ্ধকালীন বাস্তবতা-হানাদার আর রাজাকারদের নৃশংসতা যেমন তুলে ধরেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বীরোচিত কর্মতৎপরতাও ফুটিয়ে তোলেন। একই সাথে এই দেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরেন।
যশোর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল বলেন, দেশপ্রেম, সাহস আর মনোবল এই তিন শক্তিকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছে। বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শিখেছি। এরপর যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। নয় মাস ধরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরেছি।
তিনি আরও বলেন, রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্য দেশের অর্জন মলিন হয়ে যাচ্ছে। তাই নতুন প্রজন্মকে এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি নতুন প্রজন্ম ধারণ না করো তাহলে ভবিষ্যতে তোমরা ভালো মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এতদিন আমরা বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প পড়েছি। আজ সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে খুব ভালো লাগলো, অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। অনুষ্ঠান শেষে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরম্ন করে মুক্তিযুদ্ধের উপর কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতায় ৯জন বিজয়ী শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার যশোরের উপ পরিচালক হুসাইন শওকত। বিশেষ অতিথি ছিলেন জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য অফিসের সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হক এবং পরিচালনা করেন সহকারী তথ্য অফিসার এলিন সাঈদ-উর রহমান।