দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সম্ভবত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নবায়নে আগ্রহী নয়। এ অনুমাননির্ভর তথ্য এবং বাস্তবতার ব্যবধান যে বিশাল ও বিপরীতমুখী, এটি বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক মহল নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে আবারও শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ উভয় রাষ্ট্রদূতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে যে—বার্তা উঠে এসেছে, সেটি এক কথায় চমৎকার। বাংলাদেশের নবগঠিত সরকার ও জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সঙ্গে শীঘ্রই নতুন পার্টনারশিপ কো—অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) সই করতে যাচ্ছে ইইউ। এর মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের উদাহরণ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নানা বিষয়ে সম্পর্ক আছে। আমরা জঙ্গি দমন, উগ্রবাদ মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছি। ভবিষ্যতে সেসব বিষয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। আমরা উভয় দেশ সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে, আমাদের বাণিজ্য আরও বিস্তৃত করতে এবং অন্য সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করব বলে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছি।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার কথা স্পষ্ট করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একইসঙ্গে আমেরিকা বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে তেল—গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী। ইতোমধ্যে আমেরিকান একটি কোম্পানি তেল অনুসন্ধান করছে। ফলে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হতেই পারে। এখন পর্যন্ত সম্ভাবনাময় সুনীল অর্থনীতির সুফল গোলায় তোলেনি বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামর্থ্যবান এক বা একাধিক দেশ যদি সমুদ্র সম্পদ আহরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে এবং বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে লাভবান হয়, তাহলে তো সমস্যার কিছু নেই। এ ছাড়া আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। পনেরো লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চেপে বসে আছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সব সময় বাংলাদেশ আমেরিকার সহযোগিতা চেয়ে আসছে। বিষয়টি এখন আবারও নতুন করে সামনে আনা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পদক্ষেপ।
বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় আমেরিকা ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতা পাবে বলে পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করেছিল। সেটি যে একেবারে হয়নি, এমন নয়। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল মনে করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ অভিন্ন ইস্যুতে ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা এগিয়ে নেওয়া চাই। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই সরকারের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছিল। সেটি সর্বতোভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ এখন আবার বাংলাদেশের সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— বাংলাাদেশের এ পররাষ্ট্রনীতি স্মরণে রাখলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। আগামী দিনগুলোয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলুক, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।