মনিরুজ্জামান মনির : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। সব জায়গা চাষ উপযোগী করে তুলতে হবে।’ অথচ যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়া মাঠের প্রায় সাড়ে ৩শ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে বছরের পর বছর। সেচ সুবিধা না থাকায় কৃষকরা ঐ জমিতে ধান চাষ করতে পারছেন না। একমাত্র বৃষ্টির উপর নির্ভর করে কিছু জমিতে সরিষা ও পাট চাষ করা হয়। বৃষ্টি না হলে অনাবাদিই পড়ে থাকে এসব জমি।
যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রাম। এ গ্রামের দড়্গণি দিকের ধানঘাটা ব্রিজ অভিমুখী পাকারা¯ত্মার একপাশে ধানের আবাদ থাকলেও অন্যপাশে প্রায় সাড়ে ৩শ বিঘা জমি পড়ে আছে ফাঁকা। জমির মালিকরা স্যালোইঞ্জিনের সাহায্যে সেচ দিয়ে আবাদ করার চেষ্টা করলেও তা সফল হননি। কেননা শুষ্ক মৌসুমে পানির ¯ত্মর নেমে যাওয়ায় স্যালোমেশিনে পানি উঠাতে পারে না। তাদের ধারণা, গভীর নলকূপ হলে সেচ সুবিধা পাওয়া যেত। জমির মালিকরা একত্রিত হয়ে গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন কয়েক বার। কিন্তু সে পরিকল্পনার অšত্মরায় হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে মাঠে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে ৭/৮ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। টাকার অংক শুনেই তারা আর কোনো উদ্যোগ নেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই মাঠের কৃষকরা বৃষ্টির অপেড়্গায় আছেন। সরিষা সংগ্রহের পর তারা ধানের পরিবর্তে পাট চাষ করতে চান। কিন্তু স্যালোমেশিন গুলো অচল পড়ে আছে। নিরূপায় কৃষকরা বৃষ্টি হলেই পাটের বীজ ছিটাবেন বলে অপেড়্গায় আছেন। তা না হলে খালিই পড়ে থাকবে এসব জমি।
এ গ্রামের কৃষক আয়ুব হোসেন জানান, সেচ প্রকল্পের অভাবে চাষাবাদ ভালোভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের গ্রামে এখনো অনেক বিঘা জমি পানির অভাবে অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে। এই জমিগুলো বেশির ভাগই ধানী শ্রেণীর। পানির অভাবে কেউ কেউ জমিতে গাছ লাগিয়েছেন। গাছের তাৎড়্গণিক ভালো সুবিধা না পাওয়ায় আমি আবার চাষে ফিরে আসছি। কিন্তু বৃষ্টির পানির অপেড়্গায় থাকতে হয়। এখানে ১০-১৫ বিঘা জমিতে সরিষা, তিল এবং পাট চাষ করার চেষ্টা করি। তাও চাষ হয় বৃষ্টির পানিতে।
বর্তমানে বৃষ্টির পানি অনেক কমে গেছে। সেচ প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ হবে। এই মাঠে সাড়ে ৩শ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে ২০ থেকে ৩০টি স্যালোমেশিনের আওতায়। একই মাঠে ৫০ বিঘা জমিতে পানির অভাবে গাছ লাগানো হয়েছে। ডিপটিউবওয়েল স্থাপন হলে এ জমিতে ভালোভাবে চাষ করা যাবে। এ বছরে আমাদের এলাকায় ৩৩ শতাংশ জমিতে স্যালোমেশিনের আওতায় সেচের টাকা ধরেছে ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা, সেখানে বিদ্যুৎ চালিত ডিপে খরচ মাত্র ২২০০ টাকা।
তালবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, আমাদের গ্রামে পানির অভাবেই অনেক জমি চাষ হচ্ছে না। ডিপটিউবওয়েলের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে অনেকে অধিক খরচের জন্য চাষ করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ স্যালোতে খরচ বেশি।
কৃষক নাজমুল হুসাইন জানান, আমি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে পানির অভাবে বস্নক না করে সরিষার চাষ করেছি। সরিষা উঠিয়ে এখন বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় আছি। বৃষ্টি হলে এখানে তিল বা পাটের চাষ করতে পারবো। কিন্তু বৃষ্টি না হলে এই জমিগুলো পড়েই থাকবে। বর্তমানে ১০-১৫ বিঘা জমিতে অনেক কষ্ট করে চাষ করা হচ্ছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুরুল হক বলেন, ‘অনাবাদি থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি সরেজমিনে লোক পাঠিয়ে দেখবো যে কৃষকরা আসলে কোন ধরনের সমস্যায় আছে। আর কত জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। কৃষক যদি সেচের অভাবে চাষ করতে না পারে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’