বিশেষ প্রতিনিধি : যশোর পৌর এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কোরবানি করার জন্যে পৌর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট ৪৬টি স্থান নির্ধারণ এবং সন্ধ্যার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর কোরবানির চামড়া স্থানীয়ভাবে সাতদিন সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই সাত দিনে যশোর থেকে কোরবানির চামড়া ঢাকায় পরিবহণ করা যাবে না। এছাড়া মহাসড়কের পাশে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ক সভায় সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান এ সব কথা বলেন। গতকাল দুপুরে কালেক্টরেটের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় যশোর পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, পৌর এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কোরবানি করার জন্যে পৌর ব্যবস্থাপনায় ৪৬টি স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং সন্ধ্যার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। যশোর পৌরসভার এই ৪৬টি স্থানে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে ও পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডারসহ পরিবেশ সংরক্ষণের সরঞ্জাম সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
সভা থেকে পরিচ্ছন্নতার সুবিধার্থে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা, রক্ত বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলা, পরিবেশ সংরক্ষণ করা ও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সভায় বেনাপোল পৌরসভায়ও এমন ২০টি স্থান নির্বাচিত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। এছাড়া হাটে পশু কেনা বেচার ক্ষেত্রে টাকার লেনদেন নিরাপত্তার বিষয়টিসহ সার্বিক বিষয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেখভাল করবে বলেও জানানো হয়।
সভায় আরও জানানো হয়, যশোর থেকে ঈদের ৭ দিন পর্যন্ত যশোর থেকে কোরবানির চামড়া ঢাকায় পরিবহন করা যাবে না, এই ৭ দিন স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি কোরবানির হাটে পর্যাপ্ত লবণের কেনা বেচার ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে পশু ক্রেতারা লবণ কিনে চামড়া সংরক্ষণ করতে পারে।
জেলায় চলতি মাসে যত লবণ লাগবে তার চেয়েও বেশি মজুদ রয়েছে এবং লবণ নিয়ে আশঙ্কারও কোনো কারণ নেই। সভায় আরও জানানো হয় জেলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৭২২টি পশু কোরবানির আশা করা হচ্ছে। এ সব পশুর চামড়া সংরক্ষণে ৭২৩ মেট্রিক টন অতিরিক্ত লবণ লাগবে। জেলার স্বাভাবিক চাহিদা ও অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় লবণ মিলে ২ হাজার ২৫ মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০২ মেট্রিক টন ভোজ্য লবণও আছে। ফলে বাজারে সংকটের কোনো কারণ নেই এবং অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও কারণ নেই। প্রতিটি গরুর চামড়া স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণে ১০ কেজি এবং ছাগলের চামড়া সংরক্ষণে ৫ কেজি লবণ লাগবে বলেও জানানো হয় সভা থেকে।
এ সময় বিজিবি ও র্যাবের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারির ওপর জোর দেওয়া হয় যাতে চামড়া ভারতে পাচার না হতে পারে এবং ভারত থেকেও পশু দেশের বাজারে না ঢুকতে পারে। সভার সভাপতি সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেন যেনো সড়কের পাশে হাট না বসে, মেডিকেল টিম ঠিকমতো কাজ করতে পারে, হাটে লবণের নিশ্চয়তা থাকে, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হলেও সঠিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদ উল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, বিসিকের উপ মহা ব্যবস্থাপক মো. গোলাম হাফিজ, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুণ অর রশিদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক বিল্লাল বিন কাশেম, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম, বিজিবি, র্যাব প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা।